সাদা ধুতি পাঞ্জাবি পরা এক বাবুমশাই চলেছেন তাঁর শ্বশুরবাড়ি। একহাতে রসগোল্লা বোঝাই হাঁড়ি আর অন্যহাতে বড় মাপের গোটা ইলিশ। শ্বশুরবাড়ি পৌঁছেই ‘বাবাজীবন’এর সামনে লুচি মিষ্টি পায়েসে সাজানো লোভনীয় এক থালা। আর দুপুরে মাছ মাংস পোলাও নানা তরকারি সহযোগে বিস্তর আড়ম্বর। ভোজনরসিক না হলেও জামাইয়ের চোখ তখন ছানাবড়া। ওদিকে জামাই ষষ্ঠীর চিহ্ন স্বরূপ জামাইয়ের কপাল জুড়ে চন্দন ফোঁটার বাহার। দই চিড়ে আর ফলাহার দিয়ে চলছে ষষ্ঠীপুজোর আয়োজন। কী, জামাইষষ্ঠী বলতে এটাই তো বুঝি আমরা, তাই না? কিন্তু এই প্রচলিত রূপকে সম্পূর্ণরূপে ভেঙেচুরে এক নতুন ধাঁচের জামাইষষ্ঠীর আয়োজন করলেন তিনি। সংসারের দায়িত্ব গুছিয়েও আজ তিনি হয়ে উঠেছেন মর্ত্যের ঊমা।
পাপিয়া কর, যাঁর প্রোফাইল জুড়ে শুধুই আধপেটা কিংবা অভুক্ত মানুষের ভিড়। কখনো বা তাঁর টাইমলাইনে ফুটে ওঠে রাস্তায় হাঁফ ছাড়া ওই সারমেয়গুলোর মুখ। লকডাউনের বাজারে জামাইষষ্ঠী কিভাবে পালন হবে সেই চিন্তায় যখন উদগ্রীব সমগ্র নেটপাড়া, তখন তিনি ব্যস্ত হাতপাখা জোগাড়ে। লাল ফেট্টি আঁটা নকশা করা ৭০ টি হাতপাখা উপহার হয়ে যাবে তাঁর প্রিয় কিছু মুখের কাছে। ঘর্মাক্ত গরমে যাদের মাথার ছাদটুকুও নেই তাদের আরাম দিতেই এমন আশ্চর্যজনক এক পরিকল্পনা মাথায় আসে তাঁর। ক্ষুধা মেটাতে হাতে নিলেন দই, চিড়ে, মিষ্টি, আম, কলা, খেজুর, পেয়ারা, তরমুজের এক প্রকান্ড তালিকা। এর সঙ্গে উপরি আয়োজন বলতে ছিল তাঁর নিজের হাতে বানানো পোলাও আর পনীর। পথের ধারে কালিঝুলি পোশাকে বসা যে মানুষগুলোর দিকে ফিরেও তাকায় না কেউ আজ তারাই যেন কুড়োল একটুকরো স্নেহের পরশ। গেল বছর জামাইষষ্ঠীতেও পাপিয়া দেবী ঠিক একইভাবে সেইসব মা-বাবার মুখে অন্ন তোলেন যাদের প্রয়োজন ফুরিয়েছে তাদের সন্তানের সংসার থেকে। ফেলে রেখেছে কোনো এক বৃদ্ধাশ্রমে। সহায় সম্বলহীন শত শত মানুষের জন্য প্রতিটা দিন যেন পাপিয়া দেবী এইভাবেই তাঁর সর্বস্ব উজাড় করে চলেছেন।
শুধুই বাড়ির সুগৃহিণী নন পাপিয়া কর। আজ বহু মানুষের কাছে এক আস্থার জায়গা হয়ে উঠেছেন। তিনি যেন সত্যিই মর্ত্যের ঊমা কিংবা অন্নপূর্ণা। যার আশ্রয়ে অভুক্ত কেউই থাকে না। নিজেকে অনেকের মাঝে এই বিলিয়ে দেওয়াতে সবসময় পাশে পেয়েছেন তাঁর জীবনসাথীটিকেও। তাই শুধু নিজের সংসারে খুশি থেকে নন পাপিয়া কর। তাই আজ বহুজনের সংসারের সাথে ভাগ করেন তাঁর সুখের বায়না।
Discussion about this post