শহরের ব্যস্ত জীবনে হাঁপিয়ে উঠেছেন? শহর থেকে পালিয়ে গ্রামের পরিবেশে কয়েকটা দিন কাটাতে পারেন। আর তার সঙ্গে যদি থাকে ইতিহাসের ছোঁয়া তাহলে তো পুরো আলাদাই ব্যাপার। যারা একটু ঐতিহাসিক জায়গা পছন্দ করেন পঁচেটগড় রাজবাড়ি তাঁদের জন্য ভ্রমণের সেরা জায়গা হয়ে উঠতে পারে। অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলায় শিক্ষা ও সংস্কৃতি চর্চার অন্যতম প্রধান কেন্দ্র ছিল পঁচেটগড়। এই গ্রামের গুণপনার শেষ নেই। শত বছর আগে এখানে কৃষি সমবায় সমিতি, হাই স্কুল, থিয়েটারের জন্য রঙ্গমঞ্চ তৈরি হয়েছিল। এছাড়া স্থাপিত হয়েছিল সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্য শিক্ষার জন্য পাঠশালা।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার প্রাচীন রাজবাড়িগুলির মধ্যে অন্যতম পঁচেটগড় রাজবাড়ি। এটি অবস্থিত পটাশপুরে। এই রাজবাড়ির ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব থেকে শুরু করে ভারতের প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ যদু ভট্ট বা যদুনাথ ভট্টাচার্যের কাহিনি। দাস মহাপাত্র পরিবারের এই রাজবাড়ি গড়ে ওঠার পিছনে রয়েছে এক চমকপ্রদ ইতিহাস। এই রাজবাড়ির পূর্বপুরুষ মুরারিমোহন দাস মহাপাত্র ছিলেন বিখ্যাত সেতার বাদক। তাঁর সেতার বাজানোর খ্যাতি পৌঁছে যায় দিল্লির মুঘল দরবারে। এরপর মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব তাঁকে তাম্রলিপ্ত বন্দরের প্রশাসকের কাজ দেন। তাঁর কাজে খুশি হয়ে মুঘল সম্রাট পঁচেটগড় এবং সংলগ্ন বিস্তৃত এলাকার জায়গীর দেন মুরারিমোহন দাস মহাপাত্রকে।
শিবের উপাসক এই দাস মহাপাত্র বংশের পূর্বপুরুষরা এখানে স্থাপন করেন পঞ্চেশ্বর মন্দির। ধীরে ধীরে পঞ্চেশ্বর নামটি প্রচার হতে থাকে এলাকায়। সেই পঞ্চেশ্বর থেকে আজ পঁচেট গ্রামের নাম। এখানেই রাজা তৈরি করেন তাঁর পঁচেটগড় রাজবাড়ি। পরবর্তীকালে এই রাজ পরিবার বৈষ্ণব ধর্মের অনুরাগী হয়। স্থাপিত হয় বর্তমান কুল দেবতা কিশোর রাই জিউর মন্দির। স্থাপত্য শিল্পকলার দিক থেকে বিভিন্ন মন্দির ও বিভিন্ন স্থাপত্য, বিভিন্ন ঘরানার নিদর্শন পাওয়া যায় পঁচেটগড়ে। কিশোর রাই জিউয়ের মন্দিরে উড়িষ্যার রথ দেউলের শৈলীর ছাপ রয়েছে। পঁচেটগড়ের জমিদাররা ছিলেন সঙ্গীত, শিল্প ও ধর্মের প্রকৃত অনুরাগী। রাজবাড়ির সেন্ট্রাল হলকে বলা হয় ‘দ্য জলসাঘর’।
২০১৮ সালে পশ্চিমবঙ্গ হেরিটেজ বিভাগ থেকে পঁচেটগড় জমিদার বাড়িটি ‘হেরিটেজ’ মর্যাদা পায়। কলকাতা থেকে ১৮০ কিমি দূরে দীঘার খুব কাছেই পঁচেটগড়। সহজেই সড়কপথে পৌঁছানো যায় পঁচেটগড় রাজবাড়িতে। আপনি চাইলে এখানে বেড়াতে এসে পুরনো রাজবাড়িতেই থাকতে পারেন। বর্তমানে বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ করতে এবং এরকম ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে রাজবাড়ির সদস্যরা পর্যটকদের জন্য হোম স্টে চালু করেছেন। গ্রামে রয়েছে অজস্র মন্দির। আপনি একদিন রাজবাড়িতে থেকে আশেপাশের দর্শনীয় স্থানগুলি ঘুরে দেখতে পারেন। কাছাকাছির মধ্যে রয়েছে, পটাশপুরের বিখ্যাত মাদুরকাটি শিল্প, অমরসির তাঁত শিল্প, মোঘলমারি, দাঁতনের টেরাকোটা মন্দির।
Discussion about this post