ফুটবল, সারা বিশ্বে ব্যাপক পরিচিত ও জনপ্রিয় খেলা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় এই খেলাটি সকার নামে পরিচিত। ‘সব খেলার সেরা বাঙালির তুমি ফুটবল’-প্রখ্যাত গায়ক মান্না দে’র গাওয়া এই গানটিই সম্ভবত ফুটবল নিয়ে বাঙালির সেরা গান। বহু বাঙালি প্রতিভার হাত ধরে আন্তর্জাতিক ফুটবলে বাংলা তথা দেশের নাম আজও জ্বলজ্বল করছে। সেই তালিকার এক উজ্জ্বল নক্ষত্র অন্যতম গোষ্ঠ বিহারী পাল। যিনি ‘চাইনিজ ওয়াল’ নামেও পরিচিত ছিলেন। তবে প্রসিদ্ধ হওয়ার পরও খুবই সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন তিনি ও তার মা।
কোনো বাড়তি সুবিধা না নিয়েই আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের মতোই সকলের সাথে মিলে মিশে থাকতেন এই মহান ফুটবলারের মা। ঘটনাটি ভারত ভূখণ্ড খণ্ডিত হবার কিছু পরের। একবার এপার বাংলায় ছেলের কাছে আসতে দর্শনা স্টেশনে হাজির হন এক বৃদ্ধা। তার সম্বল বলতে হাতের একটা লাঠি,আর ছোট টিনের তোরঙ্গ। এদিকে পাকিস্থানের প্রহরীরা জোড় তল্লাশি চালাচ্ছেন স্টেশন চত্বরে। বৃদ্ধাকে দেখে পাক বাহিনী বলে উঠল- “খোলো দেখি বাক্স”। প্রহরীর হুকুমে তোরঙ্গের ডালা তুলে ধরলেন বৃদ্ধা। বাক্সের মধ্যে সযত্নে সেখানে সাজানো এক ফটো। তা দেখে প্রহরী জিজ্ঞেস করলেন এই ফটো কার? উনি আপনার কে? বিস্ময় কন্ঠে বৃদ্ধা উত্তর দিলেন, কেন? ও তো আমার পোলা! বৃদ্ধার উত্তরে হতভম্ব হয়ে পাক বাহিনী বললেন-” আগে বলবেন তো আপনি গোষ্ঠ পালের মা জননী, শুধু কত কষ্ট দিলাম। মাপ করে দেন আমাদের। আপনি একা গোষ্ঠ পালের মা নন, আপনি আমাদেরও জননী৷”
গোষ্ঠ পালের ছবি দেখে পাক বাহিনীর ভোল বদলে অবাক হয়ে যায় তিনি। বৃদ্ধা ভাবতে থাকেন, তাঁর ছেলের কেন এত কদর,তাঁর পুত্র না বড় রাজনৈতিক নেতা,না বড় সরকারি অফিসার,না বিত্তবান ব্যবসায়ী৷ এপার বাংলায় ছেলের সাথে দেখা হলে তিনি সব কথা জানান ছেলেকে। তখন গোষ্ঠ পাল জানান, সবাই তাকে তার খেলার জন্যই চেনেন। ছেলের কথায় তার মা হেসেই ফেললেন, কারণ তার মায়ের কাছে ছিল সবটা শুধুমাত্র খেলা। যা খেললে চোট লাগে, আর ছেলের ব্যাথায় গরম জল, চুন-হলুদ লাগানো ছিল মায়ের কাজ। এর জন্য এত পরিচিত হবে তার ছেলে তিনি কোনোদিনই ভাবতে পারেননি।
তারপর কেটে গেছে বহু দশক। তার ছেলে যে কত বড় খেলোয়াড় তিনি তা জানতেন না। তবে গোষ্ঠ পালের এই প্রতিভার পেছনে তার মায়ের অবদান কোন অংশে কম নয়। ফুটবল শুধু বাঙালিরই নয়, সারা ভারতের আবেগ। তাই আজও গোষ্ঠ পাল প্রতিজন বাঙালি তথা ভারতবাসীর মনে এক গভীর স্থান জুড়ে রয়েছে।
তথ্য ঋণ – ফিরে ফিরে চাই – অজয় বসু, ভালোবাসি বাংলা
প্রচ্ছদ চিত্র ঋণ – https://ifawb.org/
Discussion about this post