নৃশংসতা-প্রাণীহত্যা-অমানবিকতা এই ঘটনাগুলো আমাদের ইদানিং আমাদের ব্যথিত করছে। যদিও এর বীজ বপন হয়েছিল বহু যুগ আগে। বেশ কিছুদিন ধরে হাতির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত সোশ্যাল মিডিয়া। ইতিমধ্যেই হত্যাকারীর সন্ধানও মিলেছে। নিঃসন্দেহে বলা যায় এটি ভীষণই নিন্দনীয় ঘটনা এবং ভারতের ইতিহাসে এই পদ্ধতিতে হাতি মারার ঘটনা এই প্রথম। তবুও ইতিহাস বলছে অন্য কথা। এক সময় যাযাবররা পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন গ্রামে ক্যাম্প খাটিয়া পেতে গ্রামের প্রান্তের মাঠে থাকতেন। তারা এতটাই অমানবিক ছিল যে, শুধুমাত্র শিয়ালের চামড়ার লোভে শিয়ালকে হত্যা করার জন্য এক ধরনের খাদ্য বোমার ব্যবহার করতেন।
এই ধরনের বোমা বানাতে বোমার গায়ে গবাদি প্রাণীর চর্বি মাখানো হতো। তারপর সেই টোপগুলি কৃষি জমির আশপাশে ছড়িয়ে ছটিয়ে রাখা হত। শিয়াল এই বোমাগুলিকে খাবার ভেবে একবার চিবোলেই তাদের মুখের ভিতর বিকট শব্দে সেই বোমা ফেটে যেত। যার ফলে তৎক্ষণাৎ শিয়ালটি মারা যেত অথবা ওই অবস্থায় কিছুদিন ধু্ঁকতে ধুঁকতে একসময় প্রাণ ত্যাগ করত। ফলতঃ যাযাবরেরা এভাবেই খুব সহজেই মৃত শিয়ালের চামড়া চুরি করতে পারত।
পরবর্তীকালে যাযাবরদের থেকে প্রাণী হত্যার এই প্রক্রিয়া গ্রাম বাংলার কৃষকরা শেখে। সেসময় গ্রামের দিকে শেয়ালের খুব উপদ্রব ছিল। প্রায়ই শেয়ালের দল ফসলের ক্ষতি করত। তাই এই শিয়ালদের হাত থেকে বাঁচতে ও ফসলকে রক্ষা করতে চাষিরা দুটো ছোট্ট চ্যাপ্টা আকৃতির পাথরের মধ্যে বোমার মসলা দিয়ে তারপর সেটিকে পাটের তৈরি সুতো জড়িয়ে খুব শক্তভাবে গোলাকৃতির বোমার মতো করে বাঁধতেন। তারপর তাকে ডাবের জলে ভিজিয়ে রোদে শুকানো হতো। এই পদ্ধতিতে সুতোগুলো খুব শক্তপোক্তভাবে বসে যায়। এরপর সেই বল আকৃতির বোমার গায়ে প্রাণীর চর্বি লাগিয়ে তা ক্ষেতের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা হতো। বুঝতে না পেরে খাবার ভেবে শিয়াল খেলেই সেই বোমা ফেটে গিয়ে তার মৃত্যু হতো।
সাম্প্রতিক কালে কেরলেও প্রায় এই একই পদ্ধতিতে প্রাণী মারার ঘটনা সবার সামনে এলেও বর্তমান যুগে এই পদ্ধতির ব্যবহার অনেকটাই কমে গিয়েছে। কালের নিয়মে এই পদ্ধতিতেও এসেছে অনেক পরিবর্তন। তাই বিস্ফোরকের পরিবর্তে এসেছে নিঃশব্দে পশু মারার পদ্ধতি। এই ধরনের আধুনিক পদ্ধতিতে কৃষকেরা মাটির পাত্রে এঁকো গুড় জলে গুলে তার সাথে গন্ধহীন কিন্তু অত্যন্ত তীব্র রাসায়নিক কীটনাশক মিশিয়ে দেয়।তারপর সেই পাত্রকে জমির আশেপাশে রেখে দেয়। ফলে খাদ্য কিংবা পানীয় ভেবে সেই জল কোন প্রাণী পান করতে গেলেই বিষ ক্রিয়ায় তার মৃত্যু হয়।
প্রাণের হত্যা কখনোই সমর্থনযোগ্য নয়। তা সে যতই আধুনিকতায় মোড়া হোক না কেন। কালের নিয়মে যুগ বদলেছে, সময় এগিয়েছে তার নিজস্ব গতিতে, পরিবর্তন হয়েছে প্রাণী মারার পদ্ধতিরও। শুধু পরিবর্তন হয়নি এ ধরনের নিচু মানসিকতার।
তথ্য ঋণ – হিন্দোল আহমেদ
Discussion about this post