এ সুযোগ পাবেনা আর বলো ভাই কি দাম দেবে পুতুল নেবে গো পুতুল” গানটি কানে ঠেকলেই কেন জানি না চোখের সামনে ঝুড়ি হাতে দাঁড়ায় পুতুল বেচা এক ফেরিওয়ালা। হাঁক পেড়ে কালো ঘাম ফেলে যে সারাদিন বিক্রি করে চলে ভিন্ন ধাঁচের পুতুল। কিন্তু সময় বদলেছে, বদলেছে মানুষের রোজকার অভ্যেস। এই আমলের বাচ্চাদের হাতে তাই পুতুল নামক জিনিসটাই যেন একরকম বেমানান হয়ে দাঁড়িয়েছে। বরং পুতুলের জায়গাটা কেড়েছে স্ক্রিন টাচ ফোন ও কম্পিউটার কি-বোর্ড। মজার ভিডিও গেম কিংবা কার্টুন চরিত্রে মশগুল আজকের বাচ্চারা হারিয়েছে তাদের পুতুল খেলার অভ্যেস। পুতুল তাই আর এখন ছেলে ভোলানোর কাজে না বরং অগোছালো ঘরের রূপ ফেরাতেই কাজে আসে। সারি সারি না কথা বলা এই পুতুলরা তাই নির্দ্বিধায় গ্যাঁট হয়ে বসে পড়ে বাড়ির শো-কেসে। কিন্তু যুগের এই হাওয়া বদলে ফাঁপরে পড়েছেন সেই মানুষগুলো যাদের পেট চলে পুতুলের পসরায়। অভাবের আঁচে পোড়া তাদের সংসারটা এখন একরকম অসহায়ত্বের প্রতিচ্ছবি। চলুন আজ তবে পুতুলের ঝাঁপি সাজানো তেমনই এক মানুষের কাছে নিয়ে যাই আপনাদের।
হরিপদ দাস, চন্দননগর স্ট্র্যান্ডের ফুটপাতে বসা এক বৃদ্ধ। রোগা ছিপছিপে শরীর চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা। আর তার সামনে হলদে সাদা রঙের চুপটি করে বসা কতগুলো হাঁস ছানা। মাত্র কুড়িটা টাকা দিলেই একটি ছানা আপনার। না না চিন্তা করবেন না, এই হাঁস ছানারা জলে সাঁতরায় না আওয়াজও করে না বরং লক্ষ্মীছানার মতো চুপ করে বসবে আপনার ড্রয়িংরুমে। হ্যাঁ, এমনই ছোট্ট হাঁসের পুতুল নিজে হাতে বানান ওই বৃদ্ধ। বয়সের ভারে গলার স্বর বসায় পাড়া জুড়ে ফেরি করার সামর্থ্য আর আজ তাঁর কুলোয় না। কিন্তু সংসার চালানোর জন্য যে রয়েছে ঝুড়ি ভরা সততার তাগিদ। লকডাউনের বাজারে তাই সংসারের টালমাটাল দশা সামাল দিতেই তিনি পা বাড়িয়েছেন রাস্তার ওই চওড়া ফুটপাতে। দু’-চারটে পুতুল বিক্রিই হয়ত পারে ওনার এই অভাবের তাড়না খানিকটা কমাতে। সেই ভরসাতেই তো ব্যাগ বোঝাই হাঁসের পুতুল নিয়ে রোজ হাজির হন এই মানুষটা।
পথ চলতি পথে জীবন সংগ্রামের বহু যোদ্ধাই আমাদের নজরে আসে। হয়ত আমরা সময়ের অভাবে তাদের উপেক্ষা করে ফেলি। নয়তবা অহেতুক বলে এড়িয়ে যাই। কিন্তু এই সংগ্রামীদের পাশে একটিবার দাঁড়িয়ে দেখুন হাজার ভোল্টের খুশির লেনদেন হবে এক মূহুর্তেই।
চিত্র ঋণ – শক্তিরূপা সাধুখাঁ
Discussion about this post