পারমাণবিক অস্ত্র বা বোমার কথা তো আজ প্রায় কারোরই অজানা নয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই বোমার আঘাতেই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল জাপানের হিরোশিমা এবং নাগাসাকি শহর দুটি৷ প্রাণ হারিয়েছিলেন অসংখ্য মানুষ। কিন্তু এই পারমাণবিক বোমার অতীত কী? ঠিক কোন পরিস্থিতিতেই বা গড়ে উঠেছিল বোমা তৈরির নীল নকশা? জানতে গেলে আমাদের নজর ফেরাতে হবে সেই ১৯৪২ সালে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি বিশেষ পরিকল্পনা নিয়ে ময়দানে নেমেছিল। বিশ্বের প্রথম পরমাণু বোমার আবিষ্কার। এই পরিকল্পনাকেই বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যেই ১৯৪২ সালে গঠিত হয় একটি প্রকল্প, যার কোড নাম ‘ম্যানহাটন প্রকল্প’। সম্পূর্ণ প্রকল্পটি ছিল বিশিষ্ট মার্কিনি পদার্থ বিজ্ঞানী রবার্ট ওপেনহাইমারের মস্তিষ্ক প্রসূত। এর পরিচালকও ছিলেন তিনিই। এই প্রকল্পের জন্য সেসময় খরচ হয়েছিল প্রায় ২ মিলিয়ন মার্কিনি ডলার। প্রকল্পের কাজে যুক্ত ছিলেন প্রায় ২ লাখ মানুষ, তবে খুব কম জনই এর আসল উদ্দ্যেশ্য জানতেন। খুবই গোপনে কাজটি সম্পন্ন হয়েছিল। মোট দুই ধরণের পারমাণবিক বোমা বানানো হয়েছিল এই প্রকল্পে। ‘গান টাইপ ফিশন ওয়েপন’ এবং ‘ইমপ্লোশন টাইপ নিউক্লিয়ার ওয়েপন’। গান টাইপ বোমার মধ্যে ছিল দুটি বোমা। একটি ইউরেনিয়াম-২৩৫ দিয়ে বানানো ‘লিটল বয়’, অন্যটি প্লুটোনিয়াম-২৩৯ দিয়ে বানানো ‘থিন ম্যান’। অপরদিকে ইমপ্লোশনের মধ্যে ‘ফ্যাট ম্যান’ এবং ‘দ্য গ্যাজেট’ (যার পরীক্ষামূলক নাম ট্রিনিট) নামক দুটি বোমাই ছিল প্লুটোনিয়াম-২৩৯ দিয়ে বানানো। এক একটি বোমার ক্ষমতা ছিল প্রায় কয়েক হাজার টন টি.এন.টি-র সমান।
চারটি পরমাণু বোমার মধ্যে পরীক্ষামূলক ভাবে ‘দ্য গ্যাজেট’ কে নিউ মেক্সিকোর একটি মরুভূমিতে বিস্ফোরিত করা হয়। বাকি গুলির মধ্যে ১৯৪৫ সালের ৬ অগাস্ট জাপানের হিরোশিমা শহরের ওপর ‘লিটল বয়’ এবং এর তিনদিন পর ৯ আগস্ট সকালে নাগাসাকির ওপর ‘ফ্যাট ম্যান’ বোমা দুটি নিক্ষেপ করা হয়েছিল। বোমার বিস্ফোরণে সেই সময় শহর দুটিতে আনুমানিক দু লাখের বেশি মানুষ প্রাণ হারান। এরপরেও সেই বোমার তেজস্ক্রিয়তায় সৃষ্ট রোগের আঘাতে হাসপাতালে আরও বহু জনই মারা যান। মার্কিনিদের তৈরি সর্বশেষ বোমাটি এরপর জাপানের ওপর নিক্ষেপ করার উদ্দ্যেশ্যে রাখা হয়েছিল। তবে জাপান আত্মসমর্পণ করায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। তবে ছবির মত সুন্দর দুই শহর, হিরোশিমা এবং নাগাসাকির ধ্বংসলীলাই প্রমাণ করে পরমাণু বোমাগুলির ক্ষমতা ঠিক কতখানি। এমনকি আজও শহর দুটির বাতাসে মেলে এই বোমার তেজস্ক্রিয়তার প্রমাণ। সেই পুরোনো ক্ষত কিন্তু এখনও পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেনি শহর দুটি। ফলে একথা বলা যেতেই পারে যে শক্তির যুদ্ধে এক প্রধান অস্ত্র হিসাবে কাজ করে পরমাণু বোমা। তাই আজও পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশই যে এই অস্ত্রে নিজেদের অস্ত্রাগার সমৃদ্ধ করতে চায়, এ কথা বলাটা হয়ত ভুল কিছু হবে না।
Discussion about this post