একজন শিশুর শিক্ষার ক্ষেত্রে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তা কি শুধুই রুটিন মাফিক ক্লাসের জন্য? কেমন হয়, যদি প্রাণহীন ইঁট-পাথর-বালি-সিমেন্টই হয়ে ওঠে পড়ার প্রাণবন্ত সাথী? এই ভাবনাকে মাথায় রেখেই পড়াশোনার চাপ থেকে কোমল শিশু মনকে সুরক্ষিত রাখতে ২০০৯ সালের শিক্ষার অধিকার আইনে পেশ করা হয় এক অভিনব উদ্যোগ, যার নাম ‘Building as Learning Aid’ বা ‘BALA’। অর্থাৎ, শিক্ষক-শিক্ষিকার পাশাপাশি বিদ্যালয়ও হয়ে উঠবে শিক্ষার মাধ্যম! সেই উদ্যোগকেই এবার বাস্তব রূপ দিয়ে তাক লাগিয়ে দিল পশ্চিম মেদিনীপুরের নয়াগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়।
বিষয়টা ঠিক কেমন? বিদ্যালয় প্রাঙ্গণকেই ব্যবহার করে শিশুদের হাতে কলমে শেখানোই হল এই ‘শিশুবান্ধব স্কুল’ গড়ে তোলার উদ্দেশ্য। এক্ষেত্রে স্কুলের ক্লাসরুম, বারান্দা, খেলার মাঠ, সিঁড়িসহ প্রতিটি সিলিং, দরজা, জানলা, ফ্যান, গাছপালা, ফুল-ফল সমস্তটাকেই শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে কাজে লাগানো হয়। ফলে একঘেয়েমি কাটিয়ে শিশুরা নিজে থেকেই পড়াশোনা করার উৎসাহ তো পায়ই, সাথে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সাথে তাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কও তৈরী হয়। স্কুল ফাঁকি দেওয়ার বদলে স্কুলেই আরও বেশী সময় কাটানোর ইচ্ছে জাগে তাদের মনে!
নয়াগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্কুল পরিচালনা কমিটি, প্রধান শিক্ষক তথা অন্যান্য শিক্ষকদের নিজস্ব উদ্যোগে ও এলাকাবাসীর সহযোগিতায় বাস্তবায়িত হওয়ার পথে পা বাড়িয়েছে এই ‘শিশুবান্ধব স্কুল’। প্রধানত পূর্ব বর্ধমান ও মেদিনীপুরের ৭-৮ জন শিল্পীর নিরলস প্রচেষ্টার ফসল এটি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিপ্লব আর্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ‘ডেইলি নিউজ রিল’কে জানান, “পড়াশোনাটা যাতে শিশুদের কাছে বোঝা না মনে হয়, তাদের ওপর যাতে মানসিক চাপ না পড়ে, তারা যাতে আনন্দের সাথে পড়াশোনাটা করতে পারে সেসব কথা মাথায় রেখেই নেওয়া হয়েছে এই উদ্যোগ। বিভিন্ন সামাজিক বার্তা থেকে শুরু করে খেলাধূলা, সার্বিক সচেতনতা – একটি শিশুর বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় সবটাই ছবির মাধ্যমে তাদের শেখানোর প্রচেষ্টা করা হচ্ছে।”
বর্তমানে মহামারী পরিস্থিতির শিকার হয়ে থমকে গেছে প্রান্তিক শিশুদের প্রাথমিক পাঠটুকুও। এমতাবস্থায় শিশুদের স্কুলমুখী করতে এই ধরণের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়! পশ্চিমবঙ্গের আরও বেশ কিছু বিদ্যালয়ও নিজেদের মত করে উৎসাহী হয়েছে এই সাধু প্রচেষ্টায়। পাশাপাশি যুগের সাথে তাল মিলিয়ে শিশুদের মনস্তাত্ত্বিক দিকটিকে আলাদাভাবে গুরুত্ব দেওয়ার ফলে যে বেশ কয়েক পা এগিয়েছে দেশের শিক্ষাক্ষেত্র, সে কথা তো বলাই বাহুল্য!
Discussion about this post