উত্তরবঙ্গে, বিশেষ করে দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ার অঞ্চলে প্রবল বর্ষণ ও ভূমি ধ্বসের দাপটে মৃত্যুর মুখে মানুষ। অনেক অংশের রাস্তা বন্ধ, বহু সেতু ভেঙে পড়েছে, নদীগুলি যেন ফুঁসছে। তিস্তা, তোর্সা, মহানন্দা নদীর রূপ হয়েছে ভয়ঙ্কর। দুর্ঘটনায় অন্তত ১৩ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে; আরও অনেকে নিখোঁজ। পর্যটকেরা আটকে পড়েছেন, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়েছে বাংলার পাহাড়ি উত্তর।
পাহাড় কাঁদছে, নদী গর্জে উঠছে, প্রকৃতি যেন প্রতিশোধ নিচ্ছে। উত্তরবঙ্গে আজ শুধু মানুষের আর্তনাদ। জলপাইগুড়ির চা বাগান ভেসে গেছে, দার্জিলিঙের পাহাড় ভেঙে পড়ছে, তিস্তার স্রোতে ঘরবাড়ি, স্কুল, দোকান ভেঙে পড়ছে। বন্যপ্রাণীরা আশ্রয় হারিয়ে ছুটে আসছে গ্রামে। ভয়, আতঙ্ক, অসহায়তা চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। কেউ খুঁজছে নিখোঁজ সন্তানকে, কেউ ভেসে যাওয়া বৃদ্ধ মায়ের খোঁজে।
এই দুর্যোগ জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তব রূপ। অতীতের ৩০ থেকে ৩৫ বছরের গড় হিসেবটি আর আজকের ছবির সঙ্গে মেলে না। উত্তরবঙ্গের পাহাড় ও সমতলের দুর্যোগ ক্রমশ প্রকট হয়ে উঠেছে। অনিয়ন্ত্রিত পাহাড় কাটা, বৃক্ষচ্ছেদন, অবৈজ্ঞানিক সড়ক নির্মাণ এগুলিই এর মূল কারণ। বালাসন নদীর বর্তমান পরিস্থিতিকে এই বন্যার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে দেখছেন মানুষ। এর থেকে অবাধে পাথর ও বোল্ডার তোলার ফলে নদীর স্বাভাবিক গতিপথ ব্যাহত। নদীর উপর একের পর এক অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণকাজের ফলে জলধারণ ক্ষমতা হ্রাস; এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নদী তীরের জমি দখল, যার ফলে নদীর স্বাভাবিক অস্তিত্বই চ্যালেঞ্জের মুখে। ফলস্বরূপ, অতিবৃষ্টিতে নদীর জল উপচে পড়ে আশপাশের এলাকা প্লাবিত করছে।
কলকাতায় এক রাতের ভারী বৃষ্টিতে প্রায় সব স্কুল, কলেজ, অফিসে ছুটি ঘোষণা হয়েছিল। অথচ উত্তরবঙ্গে যখন মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন, পথ বন্ধ, তখন সেই একই রাজ্যে কার্নিভালের নামে উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। মুখ্যমন্ত্রী ওই অনুষ্ঠানে হাজির থাকেন বিপর্যস্ত জনপদের মর্মস্পর্শী চিৎকারের মধ্যেও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন সরকারের উচিত ছিল, দুর্গা পুজোর কার্নিভাল স্থগিত করে সম্পূর্ণ মনযোগ ও তৎপরতায় উদ্ধার কাজে মনোনিবেশ করা, কিন্তু তা হয়নি। অনেকে বলছেন, এই উদাসীনতা নিঃসন্দেহে মানুষকে সামাজিক ও রাজনৈতিক ভাবে বিক্ষিপ্ত এবং প্রতিবাদী করে তুলবে ভবিষ্যতে।
Discussion about this post