বৈচিত্র্যের দেশ আমার ভারতবর্ষ। তার প্রতিটি কোনায় লুকিয়ে আছে কত না অজানা গল্প। তামিলনাড়ুর জংলী একটা গ্রামে এমনই গল্প জমে আছে। গ্রামের নাম ভেলাগাভি। বিখ্যাত শহর কোদাইকানাল। তারই পাশে চুপ করে বসে আছে সে। চাপা পড়ে আছে শহরের তুমুল জনপ্রিয়তায়। গল্পটা হল, ভেলাগাভিতে কেউ জুতো পরে হাঁটেন না। আর কেউ যদি ভুল করে পরে ফেলেন। শাস্তি হয় তাঁর। এমনই নিষেধাজ্ঞা রয়েছে গোটা গ্রাম জুড়ে। শুনতে অবাক লাগছে! একবিংশ শতকে, যেখানে জুতো ছাড়া চলার কথা ভাবা যায় না। সেখানে এ কি নিষেধ! হ্যাঁ। পশ্চিমঘাট পর্বতের কোলের এই গ্রাম এতটাই কুসংস্কারাচ্ছন্ন।
ভেলাগাভি আসলে একটা জলাবদ্ধ বনভূমি। কোনো রাস্তা নেই তার। বসতবাড়ি খুঁজতে হয়রান হতে হয়। তবে মন্দির পাওয়া যায় প্রচুর। গুনে দেখলে, খান পঁচিশেক তো হবেই। গ্রামে ঢুকেই একটা গাছ। গাছকে কেন্দ্র করে মন্দির। বাসিন্দারা, ঐ গাছকেই দেবতা মানেন। পুজোও করেন। ভাবেন, দেবতাও তাঁদের সাথে থাকেন। তাঁদেরই গ্রামে দেবতার বসতবাড়ি। তাই তাঁর সহাবস্থানকে সম্মান করে পায়ে জুতো দেন না গ্রামের লোক। খালি পায়ে জংলা রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে বিপদও এসেছে ঢের। কিন্তু জুতো! নৈব নৈব চ। এহেন অন্ধবিশ্বাস খুব কমই দেখা গেছে বোধহয়।
প্রায় তিনশো বছরের পুরোনো এই গ্রাম। থাকেন প্রায় দেড়শো মানুষ। সকলেই চাষবাস করেন। কেউ ছাগল পুষেও জীবন চালান।আর বাড়ির দরজায় খোদাই করে রাখেন দেবতার অবয়ব। গোটা গ্রামকে তাঁরা ঈশ্বরের ঘর বলে জানেন। কুসংস্কারাচ্ছন্ন এই গ্রামে যেমন জুতো পরার চল নেই। চল নেই জোরে গান শোনা বা কথা বলারও। সন্ধ্যে সাতটা বেজে গেলে কেউ আর জেগে থাকেন না গ্রামে।ভালো রাস্তা নেই। নেই হাসপাতাল। বিপদে পড়লে তাই দেবতাই ভরসা। এঁদের দেবতা গাছ ঠিক কতখানি বিপদ ভঞ্জক তা জানা যায়নি। তবে ভগবানের প্রতিবেশীদের, কারো কাছে কোনো অভিযোগ নেই। বিশ্বাসের জোরেই বেঁচে থাকেন তাঁরা।
ভেলাগাভি যেতে ইচ্ছে হলে, প্রথমে কুম্ভকরী ফলস্ যেতে হবে। তারপর গভীর অরণ্য। তাই পায়ে হাঁটা ছাড়া অন্য উপায় নেই। পথও খুব একটা সহজ নয়। রাস্তা বেজায় সরু। একটু বেচাল হলেই সোজা গিরিখাতে পতন। গ্রামে দোকান বলতে দুটি। একটি মুদিখানা। অন্যটি চা দোকান। চায়ের দোকানদার কিন্তু পর্যটকদের জন্য ক্যাম্পিং এর ব্যবস্থা রেখেছেন। মনে সাহস থাকলে ভেলাগাভি থেকে ঘুরে আসা যায়। স্বচক্ষে দেখে আসা যায় দেবতার প্রতিবেশীদের।
Discussion about this post