গরমের ছুটিতে মনটা পাহাড় পাহাড় করে তাই না? তবে এবারের গরমে চাইলে পাহাড়েই কাটিয়ে আসতে পারেন নববর্ষ। সেখানে উদযাপনে মেজাজটা একেবারে অন্যরকম। বহু যুগ ধরে নানান আয়োজন করে পাহাড়ের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলো। এ উৎসবের নাম ‘ফুল বিজু’। সাধারনত চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের লোকজনেরাই এ উৎসবের মূল উদ্যোক্তা।
বান্দরবানের রোয়াংছড়ি স্টেশন এলাকায় এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। যার পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে সাঙ্গু নদী। সকাল বেলা এক শোভাযাত্রার মাধ্যমে শুরু হয় উৎসব। শিশু কিশোর, তরুণ তরুণী থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের মানুষেরা আনন্দের সাথে অংশ নেয় এই উৎসবে। নদীর জলে ফুল ভাসানোর মাধ্যমে আসলে ভাসিয়ে দেওয়া হয় গত বছরের দুঃখ, গ্লানি, শোক ইত্যাদি। তিন দিনের এ উৎসবে দ্বিতীয় দিনে হয় মূল বিজু। অর্থাৎ, সেদিন চলে অতিথি আপ্যায়ন। এবং শেষ দিন মানে নববর্ষের দিন হলো বিশ্রাম নেবার দিন। আঞ্চলিক ভাষায় যাকে বলে ‘গুজ্জে পুজ্জে দিন’।
এই দিনে সাধারণত অনেকে বৌদ্ধ বিহারে ভিক্ষুদের বুদ্ধ মূর্তি দান, অষ্ট পরিষ্কার দান, সংঘ দান ও বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পিন্ডু দানসহ নানান ধর্মীয় কাজ করেন থাকেন। চাকমাদের বিজু উৎসবে বহু দিন ধরে বিখ্যাত খাবারের অনুষ্ঠান হচ্ছে ‘পাঁজন তোন’ রান্না। পাহাড়ি বাড়িগুলোতে অতিথি আপ্যায়নের তালিকায় প্রথম স্থানে দখল জমিয়েছে এই খাবার। সর্বনিম্ন ১১টি পদ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৪১টি পদ দিয়ে রান্না করা হয় ‘পাঁজন’। অনেকে আবার এর চেয়ে বেশি পদও ব্যবহার করেন।খাবারের এক অদ্ভুত সমারোহ।
অনুষ্ঠান হবে, উৎসব হবে কিন্তু বিশেষ কোনো আকর্ষণ থাকবে না তা তো হয় না! আর এই উৎসবের বিশেষ আকর্ষণ হল জলকেলি। শহরে রাজার মাঠ বলে একটি স্থানে দুদিন ধরে চলে পানি বর্ষণ। বান্দরবান ছাড়াও এতে অংশ নেয় রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি নামক জেলা দুটো। গঙ্গা দেবীকে প্রথম ফুল উৎসর্গই হচ্ছে পাহাড়ের অন্যতম ঐতিহ্য। এ উৎসবটিই ত্রিপুরাবাসীর কাছে বৈসুব, বৈসু বা বাইসু, মারমাদের কাছে সাংগ্রাই নামে পরিচিত। আবার কোথাও একে বৈসাবিও বলা হয়ে থাকে। পকেটের সাথে বন্ধুত্ব থাকলে এ বছর উপভোগ করে আসতেই পারেন পাহাড়ের নববর্ষ উদযাপন, বিজু উৎসব।
Discussion about this post