মহাশ্বেতা দেবী লিখেছিলেন অরণ্যের অধিকার—অধিকার সেই মানুষদের, যাঁরা প্রকৃত অর্থে অরণ্যের সন্তান। যাঁরা জানেন জঙ্গলের গতিবিধি, বোঝেন তার নিয়ম। যাঁরা গভীর শ্রদ্ধায় গ্রহণ করেন অরণ্যের নিস্তব্ধতা, যাঁদের জীবনের ছন্দ মিশে আছে অরণ্যে। অরণ্যের অধিকার তো তাঁদেরই প্রাপ্য, যাঁরা জঙ্গলকে ভালোবাসেন, রক্ষা করেন। যে মানুষরা অরণ্যকে নিঃশেষ করে ব্যবসার লোভে, কিংবা শুধুই ফুর্তির উচ্ছ্বাসে তার পবিত্রতা নষ্ট করে, তাদের কাছে অরণ্যের অধিকার মানেই তো বিশৃঙ্খলা।
২৩ জানুয়ারি ডুয়ার্স সফরে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ঘোষণা করেছে রাজ্যের জাতীয় উদ্যান ও অভয়ারণ্যগুলিতে প্রবেশের জন্য আর কোনও প্রবেশমূল্য লাগবে না। এই নিয়ম ২৪ জানুয়ারি, ২০২৫ থেকে কার্যকর হয়েছে। । রাজ্যের পর্যটন শিল্পকে আরও উৎসাহিত করতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর মতে, অরণ্য মানুষের অধিকার। তবে, এই ঘোষণার পর থেকেই পরিবেশবিদ এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণকর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিনামূল্যে প্রবেশের অনুমতি দিলে পর্যটকদের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে, যা পরিবেশগত ভারসাম্যের জন্য হুমকিস্বরূপ হতে পারে। বনাঞ্চলে নিয়ন্ত্রণহীন ভিড় বাড়লে বন্যপ্রাণীদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হবে এবং তাদের আবাসস্থল ধ্বংসের মুখে পড়তে পারে। এছাড়া, অতিরিক্ত পর্যটন আবর্জনা দূষণ ও শব্দদূষণের কারণ হতে পারে, যা এই সংরক্ষিত অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্রকে বিপন্ন করবে। ফলে, পর্যটন সুবিধা বৃদ্ধি পেলেও, দীর্ঘমেয়াদে এটি ডুয়ার্সের প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
রাজ্যে কর্মসংস্থানের অভাবের কারণে অসংখ্য মানুষকে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে বাইরে যেতে হচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, উচিৎ ছিল পর্যটনকে লাভজনক করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা, যাতে স্থানীয়দের হাতে কাজ আসে। বিনামূল্যে প্রবেশের সিদ্ধান্তের ফলে বন ও পর্যটন বিভাগের রাজস্ব আয় কমবে, যা ভবিষ্যতে রক্ষণাবেক্ষণ ও সংরক্ষণের কাজে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। তাই, বিশেষজ্ঞদের মতে বিকল্প পথ খুঁজে পরিবেশ সংরক্ষণ এবং স্থানীয় অর্থনীতির ভারসাম্য বজায় রাখা প্রয়োজন।
Discussion about this post