বিজ্ঞানে যখন নারীর উপস্থিতি বিরল, তখন এক বঙ্গতনয়া সমস্ত বাধা অতিক্রম করে নিজেকে গড়ে তুলছিলেন। তিনি হয়েছিলেন একজন প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানী। তিনি ছিলেন ১৯৫৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনকারী প্রথম ভারতীয় মহিলা। উন্নত গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নেই? চিন্তা নেই, তিনিই সেসব নিজের হাতে বানিয়ে নিয়েছিলেন। কলকাতার রাস্তায় ঘুরে বেড়িয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সেনাবাহিনীর উদ্বৃত্ত যন্ত্রাংশ সংগ্রহ করে, সেগুলি পুনর্ব্যবহার করে তিনি এক্স-রে গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম তৈরি করেছিলেন। তিনি ডঃ পূর্ণিমা সিনহা।
ডঃ পূর্ণিমা সিনহা, অধ্যাপক সত্যেন্দ্র নাথ বসুর নির্দেশনায় ভারতীয় মাটির গঠন নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। এই গবেষণাই তাঁকে জীবপদার্থবিদ্যায় উন্নত গবেষণার জন্য আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যায়। তিনি ভারতের ভূতাত্ত্বিক জরিপ, জে.সি. বোস ইনস্টিটিউট এবং সেন্ট্রাল গ্লাস অ্যান্ড সেরামিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটে কাজ করেছিলেন। সেখানে সেরামিক এবং রঙের পদার্থবিদ্যায় তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। তাঁর গবেষণার মাধ্যমে ভারতের বৈজ্ঞানিক অগ্রগতিতে তিনি অনন্য অবদান রেখেছিলেন।
ডঃ সিনহা কেবল একজন বিজ্ঞানী ছিলেন না। প্রকৃত অর্থেই তিনি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। তিনি নোবেল বিজয়ী এরউইন শ্রোডিঙ্গারের রচনা বাংলায় অনুবাদ করেছিলেন। নিয়েছিলেন পণ্ডিত জ্ঞান প্রকাশ ঘোষের অধীনে তবলা বাজানোর প্রশিক্ষণও। ভারতীয় লোকসঙ্গীতের ইতিহাস রচনাতেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। শান্তিনিকেতনে আদিবাসী শিশুদের জন্য একটি অনানুষ্ঠানিক স্কুল পরিচালনা করে শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রসারের ক্ষেত্রেও রেখেছিলেন তাঁর অনন্য ভূমিকা।
২০১৫ সালে ডঃ পূর্ণিমা সিনহা মৃত্যু বরণ করেন। তবে বিজ্ঞান, শিক্ষা ও শিল্পকলার ইতিহাস নিঃসন্দেহে তাঁর অবদান মনে রেখেছে। কাজ সারাজীবনের কর্মকাণ্ড তাঁকে চিরস্মরণীয় করে রেখেছে ভারতীয়ের কাছে, বাঙালির কাছে। তাঁর জীবন আমাদের শেখায় যে আবেগ, অধ্যবসায় ও সংকল্প মানুষকে যে কোনো বাধা অতিক্রম করার ক্ষমতা দেয়। ডঃ পূর্ণিমা সিনহার কৃতিত্ব আজও আগামী প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে আছে।
Discussion about this post