জমিয়ে ইনিংস শুরু করেছে ২০২২ সাল। এদিকে বাঙালির মনে এখন নতুন ডায়েরির ভুরভুরে গন্ধটা ধাক্কা দিয়ে চলছে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে যাত্রা শুরু করা ক্যালেন্ডার ও ডায়েরি ধীরে ধীরে মিশে গিয়েছে আমাদের রোজকার জীবনের মজ্জায়। চন্দ্রগুপ্তই হোন বা কনিষ্ক, ক্যালেন্ডারের গুরুত্ব ঠিকই উপলব্ধি করেছিলেন তাঁরা। অন্যদিকে হিটলার থেকে জন লেননের কাছে ডায়েরি ছিল জীবনের বিশ্বস্ত সঙ্গী। বিখ্যাত ব্যক্তিত্বই শুধু নয়, আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই ডায়েরি এবং ক্যালেন্ডার একটি আলাদা জায়গা দখল করে রেখেছে। মহানগরীর বুকে ডায়েরি-ক্যালেন্ডারের খাস তালুক হল নিউ মার্কেট। নতুন বছর যতো গড়িয়ে চলে, ততোই মানুষ খোঁজ করেন হরেক রকমের ডায়েরির। একটা ক্যালেন্ডার যদি না পাওয়া যায় তাহলে মনটা খুব খুঁতখুঁত করে। তাই বর্ষপঞ্জী এবং দিনপঞ্জীর সুলুক-সন্ধান জানতে পূর্বতন ব্রিটিশ আমলের হগ সাহেবের বাজারের বাইরের ফুটপাথই অন্যতম ভরসা।
শহর কলকাতায় ডায়েরি-ক্যালেন্ডারের আঁতুড়ঘর বলতে, এক কথায় নিউমার্কেট। হগ সাহেবের বাজারের বাইরের ফুটপাতেই ডায়েরি ক্যালেন্ডার কেনাবেচার বিস্তর আসর বসে। ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের মন ভালোই বোঝেন। তাই অল্পদামী থেকে ব্র্যান্ডেড সবরকম আয়োজনই থাকে। ৩০ টাকা থেকে ৫০০০ টাকার ডায়েরির সম্ভার সেখানে। মধ্যবিত্তের সাধ্য কুলোতে ১২৫ থেকে ১৭৫ টাকার ডায়েরিও বিক্রি হয় কোনো কোনো দোকানে। এবার আসি ক্যালেন্ডারের দরদামে। বেশ বড় মাপের দেবদেবী বা মনীষীর ছবিসহ ক্যালেন্ডারের দাম ৭০ থেকে ১০০টাকা। আর ছোট আকৃতির ক্যালেন্ডার মাত্র ১০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে সংখ্যায় অনেক অর্ডার থাকলে দাম কমানো হয়ে থাকে।
এ বছর মহামারিতে আক্রান্ত হয়েছে এই ব্যবসাও। নববর্ষ অর্থাৎ মার্চ-এপ্রিলে সেভাবে বাজার দাঁড়ায়নি। বছরের শেষে এসে খানিকটা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল ক্যালেন্ডার, ডায়েরি ও নোট প্যাডের ব্যবসা। তবে এই মুহূর্তে আবার মহামন্দার আশঙ্কায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। স্মার্টফোন এসে পথে বসিয়েছে অনেকখানি ডায়েরি ও ক্যালেন্ডারের ব্যবসাকে। নোটবন্দি এবং জিএসটি চালু হওয়ার ফলে মফঃস্বলের অসংখ্য ছোট ব্যবসায়ী ফাঁপরে পড়েছিলেন আগেই। তাই আগের মতো ধর্মতলা স্ট্রিটের ফুটপাথে, চাঁদনি বাজারে, মহাত্মা গান্ধী রোডের দোকানে দোকানে কেজো ডায়েরি ও টেবিল এবং দেওয়াল ক্যালেন্ডারও বিশেষ মেলে না।
কিছু বাঙালির কাছে ডায়েরি ক্যালেন্ডার নিছক কাজের জিনিস নয়, আবেগও বটে। জীবনের সোনালি মুহূর্ত, প্রেমিক-প্রেমিকার ঝগড়া, মা-বাবার ওপর অভিমান, কোনও কিছু না পাওয়ার হতাশা; সবই বিশ্বাস করে আমরা যে বন্ধুদের বলতে পারি তার মধ্যে অন্যতম ডায়েরি। বাড়ির পুজো-পার্বণ থেকে শুরু করে নানা অনুষ্ঠানের তারিখ, পূর্ণিমা-অমাবস্যা এসবই আমাদের জানতে সাহায্য করে ক্যালেন্ডার। স্মার্টফোন বা ল্যাপটপ-ট্যাবের দাপটেও বাড়ির বড়রা নানান দৈনিক হিসেব রাখতে ক্যালেন্ডারে দাগিয়ে রাখেন। তাই বাঙালি হৃদয়ের জোরেই এভাবেই বেঁচে ডায়েরি ক্যালেন্ডারের ব্যবসা।
Discussion about this post