সারা নেদারল্যান্ড জুড়েই অসংখ্য ছোট, বড় বায়ু খামার এবং বায়ু কল দেখতে পাওয়া যায়। কারণ, নেদারল্যান্ডের বায়ু শক্তি অন্যান্য সমস্ত প্রাকৃতিক শক্তি থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী। এখানকার এই টারবাইন বা বায়ুকলগুলি সারা দেশের ১৮ শতাংশ বিদ্যুতের চাহিদা মিটিয়ে থাকে। ফলে, বায়ুকলের গুরুত্ব এখানে বেশ ভালোই। বিদ্যুতের সরবরাহের জন্য বায়ুকলের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, আরও উন্নত হয়ে চলেছে তার টেকনোলজি।
তবে দশ বছর আগেও এই বায়ুকলের প্রযুক্তি, আজকের মত উন্নত ছিল না। মাঝে মাঝেই যন্ত্রপাতি খারাপ হত, ভেঙে পড়ত অথবা আগুন লেগে যেত। এসব ছিল খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু বায়ুকলের বিগড়ে যাওয়া কখন একটি অস্বাভাবিক, ঐতিহাসিক ঘটনা হয়ে মানুষের মনে থেকে গেল? যে ঘটনার বীভৎসতা, তীব্রতা আজও ভুলতে পারা যায়না! যে ঘটনার কথা মনে করলেই গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে, আতঙ্ক আর সহমর্মিতায় বিস্মিত হয়ে ওঠে মন।
ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১৩ সালের ২৯ অক্টোবর। সাধারণ দিনের মতই দিনটি শুরু হলেও দিনের শেষে তা আর সাধারণ থাকেনি। বায়ুকলের প্রযুক্তিগত দিকগুলি দেখাশোনার জন্য সেদিন ৮০ ফিট বায়ুকলের একদম ওপরে উঠেছিলেন দুই ইঞ্জিনিয়ার। একজনের বয়স ২১ আর অন্যজনের বয়স মাত্র ১৯। আচমকা সেই টারবাইনে আগুন লেগে যায়। নেমে আসার পথের উপরে ছুটছে আগুনের হলকা। নামার উপায় নেই, ৮০ ফুট উঁচু থেকে লাফিয়ে নামলেও অবধারিত মৃত্যু। ততক্ষণে মানুষ জমা হচ্ছেন, সংবাদমাধ্যমও এসে পৌঁছেছে, এসেছে দমকল। কিন্তু, তাদের উদ্ধারের উপায় তখনও পাওয়া যায়নি।
ঠিক সেই মুহূর্তেই ছবিটি উঠলো। লেন্সে দেখা গেল টারবাইনের উপরে একদিকে দাউদাউ আগুন, আর অন্যদিকে একধারে দাঁড়িয়ে দুই মূর্তি। তাঁরা আলিঙ্গনরত। সামনে মৃত্যু অবধারিত। মৃত্যুর ঠিক আগের মুহূর্তে দুই তরুণ জড়িয়ে ধরেছেন একে অপরকে। শেষ বিদায় জানাচ্ছেন হয়ত। হয়ত তাঁরা ভীত, আতঙ্কিত। হয়ত একজন অপরজনকে স্বান্ত্বনা দিচ্ছেন। সবটাই আমাদের অনুমান। কারণ, এর পরেই একজন উপর থেকে ঝাঁপ দেন। বলা বাহুল্য, তাঁর মৃত্যু হয়। আর অন্যজন ঝাঁপ দেননা, কিন্তু আগুনের দাপটে তাঁর মৃত্যু হয়। শেষ পর্যন্ত মানুষের মনে জেগে থাকে মৃত্যুর পূর্বে তাঁদের সেই শেষ আলিঙ্গনটি।
Discussion about this post