বর্ধমান শহরের ব্যস্ত বিসি রোডের ধারগুলো বিভিন্ন ধরনের দোকানে ঠাসা। তবে ভিড়ের মাঝে নজর আটকে যায় একটা মিষ্টির দোকানের হোর্ডিংয়ে। বেশ বড় বড় অক্ষরে দোকানের নাম লেখা ‘নেতাজী মিষ্টান্ন ভান্ডার’। দোকানের মালিক সৌমেন দাস। স্বাভাবিক ভাবেই দোকানের এই নামের পিছনের ইতিহাস ওনার থেকেই জানা যায়। আজ প্রায় বছর বত্রিশ সৌমেনবাবু দোকান সামলাচ্ছেন। তবে দোকানে বয়স আরো অনেকটাই বেশি। সৌমেন দাসের দাদু চন্দনবাবু ছিলেন এই দোকানের প্রতিষ্ঠাতা।
নেতাজী মিষ্টান্ন ভান্ডারের ইতিহাস জানতে হলে পিছিয়ে যেতে হবে বেশ অনেকটা সময়। সুভাষচন্দ্র বসু তখন কলকাতার মেয়র। বর্ধমান পুরসভা উনি চালু করেন। সেই কাজের সূত্রেই একবার বর্ধমানে আসেন তিনি। বিসি রোডে এক ব্যাঙ্কে কাজ মিটিয়ে ফেরার সময় মিষ্টির দোকানে ঢোকেন নেতাজী। খড়ের চাল দেওয়া সেই দোকানটি ছিল সৌমেনবাবুর দাদু চন্দনবাবুর মিষ্টির দোকান। নেতাজী নাম সব বাঙালির কাছেই আবেগের। এরপরেই চন্দনবাবু ওনার দোকানের নাম রাখেন নেতাজী মিষ্টান্ন ভান্ডার। শুধু তাই নয় নেতাজীর জন্মদিনে প্রতি বছর সবাইকে লাড্ডু বিলিও করতেন তিনি।
দোকানে টাঙানো বেশ কিছু ছবির মধ্যে নজর কাড়ে পুরানো কাঠের ফ্রেমে বাঁধানো সাদা-কালো একটা ছবি। যে মানুষটির লড়াকু মনোভাব ও দেশপ্রেম ব্রিটিশ সরকারের সাহস ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল। ছবিতে সেই মানুষটি ধুতি পাঞ্জাবি ও গলায় চাদর জড়িয়ে তার ভঙ্গিমায় হেঁটে চলেছেন। সঙ্গে এবং পিছনে হাঁটছেন তার অনুগামীরা। ছবিটিতে চন্দনবাবুও আছেন। ছবিটা দেখেই রবীন্দ্রনাথের সেই লাইনটা মনে পড়ে “চিত্ত যেথা ভয় শূন্য, উচ্চ যেথা শির।” ধন্য এই মিষ্টির দোকান, ধন্য শহর বর্ধমান।
চিত্র এবং তথ্য ঋণ – অমিত দত্ত
Discussion about this post