কংগ্রেস থেকে ভেঙে বেরিয়ে হিন্দু মহাসভায় যোগদান করেন শ্যামাপ্রসাদ। এই সময় তিনি দলে টানতে চেয়েছিলেন কংগ্রেসের প্রতি ক্ষুব্ধ সুভাষচন্দ্র বসুকে। কিন্ত তাঁর সে আশায়, বেমালুম জল ঢেলে দিলেন সুভাষ। বিনায়ক দামোদর সাভারকরের ১৯৩৯-এর কলকাতা সফরের পরে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী হিন্দু মহাসভায় যোগ দেন। বাঙালি হিন্দুদের ভয়ের আগুনে ঘি ঢালতে থাকেন শ্যামা। কংগ্রেস ‘মুসলিম তোষণকারী’ বলে তোপও দাগেন তিনি।
সুভাষচন্দ্র মুখার্জী বাড়ির পারিবারিক বন্ধু ছিলেন। যদিও শ্যামাপ্রসাদের হিন্দুত্ববাদী কার্যকলাপ একেবারেই সহ্য করেননি। শ্যামাপ্রসাদ সুভাষকে তাঁর দলে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানান। পাল্টা সুভাষ বলেন, বাংলার মাটিতে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি চালানোর চেষ্টা করলে তাঁর ফরওয়ার্ড ব্লক সর্বশক্তি দিয়ে তা রুখবে। কিছুদিন পরেই ফরওয়ার্ড ব্লক হিন্দু মহাসভার মিটিং বানচাল করে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে। এ সব কথা শ্যামাপ্রসাদ অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের (এবিভিপি) প্রতিষ্ঠাতা বলরাজ মাধোকে নিজে লিখে গিয়েছেন।
অন্যদিকে নিজের বিভিন্ন লেখায় নেতাজি শ্যামাপ্রসাদের দলকে বয়কট করার আহ্বান বারবার করেছেন। তিনি ১৯৪০ সালের ১২ মে ঝাড়গ্রামে জনসভায় একটি বক্তব্য রাখেন। তাঁর দু’দিন পরেই আনন্দবাজার পত্রিকায় সেটি ছেপে বেরোয়। “সন্ন্যাসী ও সন্ন্যাসিনীদের হিন্দু মহাসভা ত্রিশূল হাতে ভোটভিক্ষায় পাঠিয়েছে। ত্রিশূল আর গেরুয়া বসন দেখলে হিন্দু মাত্রেই শির নত করে। ধর্মের সুযোগ নিয়ে ধর্মকে কলুষিত করে হিন্দু মহাসভা রাজনীতির ক্ষেত্রে দেখা দিয়েছে। এই বিশ্বাসঘাতকদের আপনারা রাষ্ট্রীয় জীবন থেকে সরিয়ে দিন। তাঁদের কথা কেউ শুনবেন না। আমরা চাই দেশের স্বাধীনতাপ্রেমী নরনারী একপ্রাণ হয়ে দেশের সেবা করুন। হিন্দুরা ভারতে সংখ্যাগরিষ্ঠ বলিয়া হিন্দুরাজের ধ্বনি শোনা যায়। এগুলি সর্বৈব অলস চিন্তা। হিন্দু ও মুসলমানের স্বার্থ পৃথক ইহার চেয়ে মিথ্যা বাক্য আর কিছু হতে পারে না। বন্যা, দুর্ভিক্ষ, মড়ক ইত্যাদি বিপর্যয় তো কাউকে রেহাই দেয় না।”
Discussion about this post