কবিদের জীবনে প্রেম আসে প্রেম যায়, এ চলতি কথা। তবে প্রেম যেমন আনন্দে আচ্ছন্ন করে রাখে তেমনি তাতে খুঁজে পাওয়া যায় বিদ্রোহ। আর সে বিদ্রোহ ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে বিরহের তালে। বিদ্রোহী কবির জীবনেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। একদিকে তার কলমের বিদ্রোহ আর একদিকে তার জীবনের। কবির গানে উল্লেখ পাওয়া যায় ‘নার্গিস’ নামে এক নারীর। কবির জীবনের তিনিই প্রথম নারী, প্রথম প্রেম। যদিও পরে প্রমীলা নামক এক নারীর সাথে বিবাহে আবদ্ধ হন নজরুল ইসলাম।
১৯২১ সালে তিনি কুমিল্লায় যান আলী আকবর খানের বাড়িতে। সেখানেই সৈয়দার সাথে তার প্রথম সাক্ষাৎ। সৈয়দাকেই ভালোবেসে ‘নার্গিস’ বলে ডাকতেন তিনি। দুই তরুণ তরুণীর প্রেমের উদ্দামতার পর ঠিক হয় তাদের বিয়ের দিন। ১৩২৮ বঙ্গাব্দের ৩রা আষাঢ়। তবে সে বিয়ে হয়নি। কারণ, কবিকে শর্ত দেওয়া হয়েছিল ঘর জামাই থাকার জন্য। আর তাতেই যথারীতি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন তিনি। সেদিনই তিনি নার্গিসকে একা ফেলে কুমিল্লা ছেড়ে চলে আসেন। আর্থিক প্রলোভন দেখিয়ে তাঁকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হলে তার ক্ষিপ্ততা আরও বেড়ে যায়। তারপর দীর্ঘ পনেরো বছর কবির কোনো যোগাযোগ থাকেনি নার্গিসের সাথে।
তবে দীর্ঘ অবসান ঘটে একটা চিঠির মাধ্যমে। এই তার নার্গিসকে লেখা প্রথম এবং শেষ চিঠি। এ চিঠিতে আসলে প্রকৃতি, প্রেম, বিরহ, স্মৃতিচারণা সব মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে। নার্গিসের অনুযোগের এক উত্তর এই চিঠি। নজরুল নার্গিসের প্রতি উল্লেখ করেছেন, ‘তোমার উপর আমি কোনো জিঘাংসা পোষণ করি না’। নার্গিসের প্রতি তার এই ব্যবহার আসলে তাঁকেও দগ্ধ করেছেন বেদনায়। দু প্রান্তে দুটি মন সমান মানে তপ্ত হয়েছে প্রতিনিয়ত।
আসলে কবিরা আঘাত করলেও সে আঘাত যেন নেমে আসে ফুলের হাত ধরে। তাঁর জীবনের প্রথম নারীকে তিনি দেবীর মত পুজো করতে চেয়েছিলেন। তবে প্রেম হলো ধ্রুব সত্য, আর আত্মার মরণ হয় না। তাই সব দুঃখ সঙ্গে নিয়েও এ প্রেম রয়ে গেছে তার কাব্যের মাধ্যমে। তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘অগ্নিবীণা’ বেজে ওঠার সুরের সূচনা ছিল তাঁর প্রেম ‘নার্গিস’। তবে বিরহ, দুঃখ সব কিছুকে তুচ্ছ করে সব শেষে প্রাণ ভরে তিনি আশীর্বাদ করেছিলেন নার্গিসকে। আর এই চিঠি তাই আজও এক জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে রয়েছে ভক্তি ও ভালোবাসার মিশ্রণের।
তথ্য ও চিত্র ঋণ – লিটারেসি প্যারাডাইস
Discussion about this post