হুগলীর নালিকুলের ছাত্রছাত্রী ও এলাকার মানুষের এক উদ্যোগের নাম ‘পালাপাব্বন’। ২০১৬ সাল থেকে প্রত্যেক বছরের দু’টো করে দিন নাটক, নাচ, গানের আসর আর হাতে তৈরী জিনিসের পসরা বসে নালিকুল গ্রামের বাঁধের মাঠে। গত ১ ও ২ এপ্রিল নালিকুলে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এ বছরের ‘পালাপাব্বন’। অবশ্য অনুষ্ঠান না বলে দু’দিনের যাপন বলাটাই ভালো। পালাপাব্বনের আয়োজক, পালাপব্বনের অতিথি-বন্ধু সবার কাছে সব কিছুর সঙ্গে এই দু’দিনের যৌথযাপন মিলিয়েই পালাপাব্বন।
মূল অনুষ্ঠানের তিন মাস আগে থেকেই ‘পালাপাব্বন’ শুরু হয়ে যায় গ্রামগানের মাধ্যমে। গান গেয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে সংগ্রহ করা হয় মাধুকরী। মানুষের এই উৎসবের অর্থের জোগান এলাকার মানুষই দেন নিজেদের সাধ্য মত।, তার সঙ্গে নালিকুলের ছাত্রছাত্রীদের দিন-রাত এক করে পরিশ্রমের ফসলই হল ‘পালাপাব্বন’। প্রথম দিন শুরুটা হল এই ‘গ্রামগান’-এর দলের গান দিয়ে। যে সব গান একান্তই বাংলার, যে সব গান বাংলা শেকড়ের কথা বলে তেমন সব গান দিয়ে। ‘হইচই’ দলের নাটক ঘুড়ির লড়াই এবং ‘ইনসাইড আউট’ দলের ‘পাঞ্চ লাইট’ নাটকের ভাবনা সরাসরি মানুষের মগজে টোকা মারে। বাংলার হারাতে বসা নাচ ‘রায়বেঁশে’ অনেকেই প্রথমবার চাক্ষুষ করলেন নালিকুলের পালাপাব্বনে। দ্বিতীয় দিনের শুরু করেন অরুণ পটুয়া তাঁর বানানো পটকেন্দ্রিক গান গেয়ে। তারপর উঠোনে হয় আনন্দ বাজারের গান। তিনমাসের নানা পরিশ্রমের মাঝেও ‘পালাপাব্বন’-এর দলবল উপস্থাপন করে নাটকের কলাকুশলীদের জীবনের বাস্তবতা ও কল্পনার মিশেলে এক অভূতপূর্ব নাটক ‘স্যান্ডির চায়ের দোকান’।
অনুষ্ঠানের শেষ লগ্নে পালাপাব্বনের মাটির খোলা উঠোনে ‘জলের গান’-এর সাথে হৈচৈ করে শেষ হল পালাপাব্বন। গানের সঙ্গে গলা মিলিয়ে গান, দল বেঁধে নাচ, বাঁধ ভাঙা উচ্ছ্বাসে মনের কাঁটাতার ভেঙে এক হয়ে গেল পশ্চিমবঙ্গের নালিকুল, বাংলাদেশের ময়মনসিংহ। বাংলার নিজস্ব সংস্কৃতি ভাবনা, মাটির সঙ্গে জুড়ে থাকা শিল্পকে আরও ছড়িয়ে দিতে চায় এই ‘পালাপাব্বন’। ভালোবাসা বিলোনোর এই উৎসবে আয়োজক, দর্শক, বন্ধু, আমন্ত্রিত গানের দল সবাই সবাইকে বলতে চেয়েছে একটাই কথা, “এই পাগলের ভালোবাসাটুকু নিও।”
Discussion about this post