সাধারণতঃ ফেব্রুয়ারী মাসের অমর একুশে বইমেলাকে কেন্দ্র করেই বাংলাদেশের বেশিরভাগ বই প্রকাশিত হয়। সেখানে বছরের মাঝে প্রকাশিত হল বাংলাদেশের কবি-উপন্যাসিক-গল্পকার ও উত্তর উপনিবেশী ভাবধারা নিয়ে কাজ করা লেখক আসমা সুলতানা শাপলার পাঁচটি ছোট গল্পের বই ‘নহন্যিয়া’। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত কিছু বছর তিনি শাপলা সপর্যিতা নামে লিখেছেন।
‘নহন্যিয়া’ বিশেষত নারীর জীবন-যু্দ্ধ, সমাজ-সংসার, ধর্মাধর্মের পথ, মানবিক লিপ্সা এসবের বিপরীতে দাঁড়িয়ে নারীর ‘পারসুয়েশন অফ হ্যাপীনেস’ নিয়ে আবর্তিত গল্প। পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে নিজ চোখে দেখা একজন মুক্তিযোদ্ধার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে খুন হবার সত্য গল্পের মধ্য দিয়ে গল্পকার দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদ বীরদের ও মুখে মুখে বলা সত্য কাহিনীর মাধ্যমে স্বাধীনতার দলিল বলে চলেছেন যে সব দাদী নানী বা মায়েরা তাদের প্রতিও শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। রয়েছে ভারত বাংলাদেশের দুই নর-নারীর প্রেম ও জীবন নিয়েও গল্প।
বইটির নামভূমিকার গল্পটি হল ‘নহন্যিয়া।,এই নহন্যিয়া কে? নহন্যিয়া কেন? কীই বা শব্দটির অর্থ। শব্দটি শোনামাত্রই একটা ভাবনার মধ্যে চলে যায় কৌতুহলি পাঠক। টেনে নেয় বইটি দেখার পড়ার ও জানার একটা তীব্র ইচ্ছার ভিতর। ‘নহন্যিয়া’ শব্দটির ও গল্পগুলো কেন কোন অবস্থায় কোন দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা তার বিশদ ব্যাখ্যা বইটির ভূমিকাতে লেখক লিখে রেখেছেন। ডেইলি নিউজ রিলকে আসমা সুলতানা শাপলা জানালেন, ‘নহন্য’ শব্দটির অর্থ হল যাকে বধ বা শেষ করা যায় না। শব্দগত অর্থের বাইরেও আরও দূরে গেলে ভাবনাটা লেখকের এতোটাই মনের গভীর থেকে যাকে নিশ্চিহ্ন করা সম্ভব হয় না। তেমনই একজন নারী লেখকের যৌবন কালে পাওয়া বন্ধু। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শেষ হয়েছে মাত্র সময়ে যে নিজেকে নিজেই হত্যা করেছে। আজ এত বছর পরেও যে লেখকের মনে ‘নহন্য’ রয়ে গিয়েছে।
তার গল্পটির নামেই বইটির নাম ‘নহন্যিয়া’। এই শব্দটি কোনো অভিধানে আছে বলে লেখকের জানা নাই। তবে ‘নহন্য’ শব্দটিকে মূল ধরে নিজের মতো লিঙ্গান্তর করে স্ত্রীলিঙ্গ বাচক শব্দ বুঝাতে লেখক নিজের ইচ্ছাতে ‘নহন্যিয়া’ শব্দটি তৈরি করেছেন। বিশেষত লেখক মনে করেন শব্দ তৈরির অধিকার বা যোগ্যতা লেখকের থাকতেই পারে যদি বা বিষয় দিয়ে পাঠকের কাছে বোধগম্য করে তোলা যায়। সে সেক্ষেত্রে ‘নহন্যিয়া’ শব্দটি পাঠক সদর্থকভাবেই গ্রহণ করেছে এবং প্রি-অর্ডারে বইটি যেমন বিক্রি হয়েছে একই সাথে প্রচুর পাঠক কেবল অনলাইনেই বইটি কিনেছেন, পড়ছেন। এমনকি সরাসরি লেখকের সাথে কথাও বলেছেন। এটি লেখকের প্রথম গল্পের বই। আর এর সাথেই সম্পূর্ণ হল লেখক হিসাবে আসমা সুলতানা শাপলার সাহিত্যের প্রত্যেকটি রূপের (কবিতা-গল্প-উপন্যাস-প্রবন্ধ-নাটক) ভিতর পদচারণা। তাই তার কাছে এই গল্পের বইটি এক বিশেষ।
Discussion about this post