মিশর অর্থেই যেন রহস্যময় এক গোলকধাঁধাঁ। যার পরতে পরতে জুড়ে রয়েছে তাজ্জব ঘোটপাকানো সব ইতিহাস। সাদা কাপড় প্যাঁচানো মৃত মানুষের আস্ত শরীর ‘মমি’ যেন সেইসব ঘটনারই জলজ্যান্ত সাক্ষী। ভাবতেও অবাক লাগে পিরামিডের মতো বিশাল সমাধির ঠিক তলায় পড়ে রয়েছে কোনো এক রাজার জড় দেহটি। নশ্বর শরীরটা যেন যুগ যুগ ধরে দম আটকে রয়েছে ওই অন্ধকার মহলে। তবে মিশরীয়দের কাছে পবিত্রতম এক ধর্মীয় আচারই ছিল এই মমির সমাধি। এক একসময় মনে করা হত মমি হওয়ার যোগ্যতা দেশের একমাত্র অধিপতি ফ্যারাওদেরই প্রাপ্য। কিন্তু সে ধারণাকে ওলটপালট করে এমন এক তথ্য সবার সামনে এল যা রীতিমতো অবাক করে তুলল ইতিহাস গবেষকদের। চলুন তবে দেখা যাক কি সেই তথ্য!
দুটি ছোট আকৃতির কফিন যা খুলতেই বেরিয়ে পড়ে একটি ভিন্ন ধাঁচের পাখির মমি। সাথে ছিল কাদা আর কাঠ এবং বিভিন্ন গাছগাছালি দিয়ে তৈরী ছোট্ট মানুষের পুতুল আর প্রচুর পরিমান শস্য। তবে কি পাখিকেও মমি বানানোর চল ছিল মিশরীয় সভ্যতায়? শুরু হলো গবেষণা। সর্বপ্রথম উঠে এল আইবিস নামের এমন এক পাখির নাম যাকে দেখতে খানিকটা বাংলার ওই কাস্তে বক গোছের। সাধারণত জলাশয়ের আশেপাশেই দল বেঁধে থাকে এরা। আফ্রিকার কাছে আইবিস পবিত্রতম পাখি হওয়ায় তার সৎকারও ঘটত মমির আকারেই। টুনা-এল-গ্যাবেল, সাক্কারার মতো জায়গায় যে কত লক্ষ আইবিস মমির অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে তা গোনার বাইরে। আসলে মিশরীয়দের জ্ঞান, জাদু, বিচার ও লেখার দেবতা থথের অংশই হল এই আইবিস। দেবতা মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করলেই আইবিসকে ধরে মমির আদলে উৎসর্গ করা হত দেবতার পায়ে। আবার কারোর গবেষণা বলছে পরিযায়ী এই পাখিরা যেসময় আসত তখন তাদের ধরে উৎসর্গ করাই ছিল তৎকালীন পবিত্রতার এক আদর্শ মাপকাঠি।
পাখি ছিল মিশরবাসীর কাছে একরকম হর্তাকর্তা বিধাতা। তাই তাদেরও মানুষের মতোই সযত্নে গচ্ছিত করে রাখা হত ওষুধমাখা মমির বেড়াজালে। আয়োজন করা হত সেইসব জিনিসের যা এক রাজার সমাধির পাশেই সাধারণত শোভা পেত। এমনকি কখনো কখনো ফ্যারাওয়ের দেহরক্ষী হিসেবেও পাখিকে সমাধিস্থ করার চল ছিল প্রাচীন মিশরে। পাখি মমির এই আবিষ্কার পেয়েছে ২০১১ সালের দীর্ঘ সময়কালের সব থেকে বড় ঘটনার শিরোপা। মিশরের বুকে দানা বাঁধা প্রতিটি রহস্যের জট এভাবেই এক এক করে আজ উন্মোচনের পথে।
চিত্র ঋণ – এমএনএস, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক
Discussion about this post