দু’সপ্তাহ ব্যাপী আইপিএল ক্রিকেট শুরু হয়েছে গত ২৬ মার্চ থেকে। তাই আইপিএলের খবরের ভিড়ে কোথাও যেন ফিকে হয়ে যাচ্ছে জুনিয়র মহিলা হকি বিশ্বকাপে ভারতীয় দলের বিজয় মূহুর্তগুলি। কোয়ার্টার ফাইনালের বাঁধা পার করে শেষ চারে পৌঁছেছিল সঙ্গীতা কুমারীরা। ভারতের এই সাফল্যের পেছনের একটি বড় স্তম্ভ ১৯ বছরের মুমতাজ। চলতি বিশ্বকাপে ভারতের হয়ে ছয়টি গোল করেছেন এই তরুণী হকি খেলোয়াড়।
লখনউয়ের তোপখানা অঞ্চলে মা বাবা ও বোনদের নিয়ে ছোট্ট সংসার মুমতাজের। বাড়ির কাছেই তোপখানা বাজারের ভিড় রাস্তার এক গলিতে সব্জি গাড়ি নিয়ে বসেন মুমতাজের মা কাইসার। শুক্রবার কোয়ার্টার ফাইনালে দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে গোল করে ম্যাচের সেরা হয়েছেন মুমতাজ। কিন্তু মেয়ের এই দুর্দান্ত খেলা দেখতেই পারেননি মা কাইসার জাহান। কারণ তিনি তখন ব্যাস্ত ছিলেন সবজি বিক্রি করতে। মেয়ের খেলার সেরা মূহুর্তগুলি না দেখতে পেয়ে কিছুটা হতাশ কাইসার জাহান। তিনি জানান, “সেই সময়টা আমার জন্য প্রচন্ড ব্যস্ততার ছিল। আমার খুব ভালো লাগত ওকে গোল করতে দেখতে, কিন্তু আমারও তো অন্নসংস্থান করতে হবে গোটা পরিবারের। আমি নিশ্চিত ভবিষ্যতে আরও অনেক সুযোগ আসবে ওকে দেখার জন্য।”
দিদির এই অসাধারণ খেলার মূহূর্ত গুলিতে মোবাইল স্ক্রিনের সামনে থেকে একটুও সরেনি মুমতাজের বোনেরা। খেলার সময়ে মেয়ের ভালো খেলার জন্য মসজিদে প্রার্থনা করতে গিয়েছিলেন বাবা হাফিজ। এই দুর্দান্ত খেলা নিয়ে গর্বিত দিদি ফারাহ বলেছেন, “এমন সময় ছিল যখন আমাদের কিছুই ছিল না, যখন কিছু মানুষ আমার পরিবারকে দুষত এক মেয়েকে খেলায় পাঠানোর জন্য। কিন্তু আমরা সেই সকল মন্তব্যকে দূরে সরিয়ে মমতাজকে ওর স্বপ্নের দিকে এগিয়ে দিয়েছিলাম। আর আজ, মনে হচ্ছে যেন মুমতাজ তাদের সকলকে যোগ্য জবাব দিয়েছে।” রবির সেমিফাইনালে নেদারল্যান্ডের কাছে হেরে যায় ভারত। কিন্তু এই বিশ্বকাপ হকি ভারতকে উপহার দিয়েই ফেলল এক নতুন তারকা। তাই সবশেষে এটি বলাই যায়, লখনউয়ের ছোট্ট গলি থেকে আজ বিশ্বমঞ্চের রাজপথ, মুমতাজের এই সাফল্যের পিছনে তার পরিবারের আত্মত্যাগ অনস্বীকার্য।
Discussion about this post