সরকারি চাকরি, যা শুনলে চলে আসে বিশাল খাটনির গ্রাফ। কাজে যতো না ক্লান্তি তার চেয়ে ঢের বেশি ক্লান্তি সে কাজ পেতে! আমি আপনি পারি বা না পারি, সরকারি চাকরি জুটিয়ে দিব্যি ছিল জ্যাক। কে এই জ্যাক? জ্যাক একটি বাঁদর। চাকমা বাবুন প্রজাতির এই বাঁদরটি ঘটিয়েছিল আশ্চর্য এক ঘটনা। এ ঘটনা আজ থেকে প্রায় ১৪০ বছর আগের। তবুও বর্তমানে তা ভাবলে অবাক হতে হয় নতুন করে।
এ ঘটনাটি দক্ষিণ আফ্রিকার এক অদ্ভুত বাস্তব। শুনলে গল্প মনে হতে পারে, কিন্তু না একেবারে খাঁটি সত্যি। দক্ষিণ আফ্রিকার একজন রেলকর্মী ছিলেন জেমস ওয়াইড। তার পুরো নাম জেমস এডউইন ওয়াইড। সময়টা ১৮৮০। জেমস ছিলেন পঙ্গু মানুষ। কারণ তার দুটি পা অকেজো ছিল। আর্টিফিশিয়াল পা লাগানোর পর তিনি কাজে ফেরেন। তবে তার কাজের ক্ষমতা আর আগের মত ছিল না। একদিন তিনি বাজার করতে গিয়ে দেখেন একটি বাঁদর গরুর গাড়ি চালাচ্ছে। তিনি অভিভূত হন। সেই সাথে জেমস নিজের জন্য একজন সহকর্মী খুঁজছিলেন। তখনই তার মাথায় খেলে যায় দুর্দান্ত এক বুদ্ধি। হঠাৎই তিনি সেই বাঁদরটিকে নিয়ে আসেন তার সহকর্মী হিসেবে। আর নাম রাখেন ‘জ্যাক’।
জেমস মূলত ছিলেন রেলওয়ে সিগন্যালম্যান। আর জ্যাক এই কাজেরই ট্রেনিং পায় তাঁর থেকে। তবে প্রথমেই জ্যাকের রেলওয়ের কাজের ট্রেনিং হয়নি। একেবারে শুরুতে জ্যাক সাহায্য করতো ঘরের কাজে। হাউসকিপিং থেকে শুরু করে মেঝেতে ঝাঁট দেওয়া সবটাই ছিল জ্যাকের বাঁ হাতের খেল। তাতে জেমস ছিলেন বেজায় খুশি। কারণ তার একজন সাহায্যকারীর প্রয়োজন অবশেষে ফুরলো। তবে জ্যাক এমনি এমনি তার মালিকের কথা শুনতে নারাজ। আদেশ পালনের জন্য তার চাহিদা ছিল মদের। মদের নেশায় বুঁদ হয়ে তবে সে কাজ করবে, এমনটাই ছিল তার অভ্যেস।
তবে একথা সত্যি মাতাল হয়েও জ্যাক কোনোদিন তার কাজে ভুল করেনি। হয়তো সে মানুষ ব্যতীত অন্য প্রাণী বলেই তা সম্ভব হয়েছে। নিয়ম মত সিগন্যাল দেওয়া খুব সহজে তার কাজ হয়ে দাঁড়ায়। তবে জেমস প্রথম দিকে তাকে মানুষের মতো পোশাক পরিয়ে কাজ করাতেন। তবে হঠাৎ কোনো এক যাত্রী তা দেখে ফেলেন এবং উচ্চমহলে অভিযোগ জানান। আর তাতে যেন শাপে বর পায় জ্যাক। তাঁকে শাস্তি দেওয়া তো দূর বরং তাকে চাকরিতে নিযুক্ত করা হয় আইনিভাবে। সপ্তাহে অর্ধেক বোতল বিয়ার আর মাসে ২০ সেন্ট এই ছিল তার পারিশ্রমিক। রেলওয়ে সিগন্যালম্যান হিসেবে সে ৯ বছর টানা কাজ করে গেছে। টি বি রোগে আক্রান্ত হয়ে জ্যাক মারা যায় ১৮৯০ সালে। জ্যাকের কঙ্কাল বর্তমানে গ্রাহামস্টাউনের মিউজিয়ামে রাখা রয়েছে। অদ্ভুত এ ঘটনা আজও চোখে আঙুল দিয়ে প্রমাণ করে দেয় বাঁদর বলেই সে অবজ্ঞার পাত্র নয়।
Discussion about this post