‘স্মার্ট’ বলতে একটা সময় বুদ্ধিমান কিংবা চটপটেদেরই বোঝাতো। কিন্তু আজ এই ‘স্মার্ট’ শব্দটির সংজ্ঞা বদলেছে। হাতে দামী হ্যান্ডসেট কিংবা ইংরেজীতে বেশ পটু, সে-ই হল স্মার্ট। আর দেখনদারির এই যুগে বইয়ের গুরুত্ব যে একদম বাতিলের খাতায় তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বইয়ের সাথে যোগাযোগ বলতে ওই পাঠ্যপুস্তক অবধি। এখন বোধহয় সেটিও উপেক্ষিত। অনলাইন পড়াশুনা অনলাইন ক্লাস অনলাইন টিউশন। তবে কি আগামী প্রজন্মে দুই মলাটে বাঁধা ওই খসখসে কাগজগুলো হারাতে বসেছে? বই, লাইব্রেরী সবটাই কি তবে বিলুপ্তির পথে? এই প্রশ্নের সম্মুখেই যখন দাঁড়িয়ে গোটা বিশ্ব ঠিক তখনই এক অভিনব প্রচেষ্টার হদিশ দিল দুর্গাপুরের একটি সংস্থা। আর সেটি হল চলমান লাইব্রেরী।
‘পলাশডিহি কিশোর বাহিনী’ সংস্থা। প্রতি রবিবার বিকেল ৪টে থেকে ৪:৩০-এর মধ্যে সংস্থার সদস্যরা মোটর বাইকে চেপে হাজির হন বিভিন্ন স্পটে। সাথে থাকে ব্যাগ ভর্তি রকমারি বইয়ের আস্ত এক লাইব্রেরী। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, সুকান্ত থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় পাঠ্যপুস্তক সবই রয়েছে এই ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরীতে। গোটা এলাকার ৭টি স্পটে এইভাবে বই বিলি করেন তাঁরা। আর সপ্তাহ শেষে বই ফেরৎ কিংবা রিনিউ করে নিতে হবে পড়ুয়াদের। ৫ থেকে ১৬ বছরের শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই চাহিদা অনুযায়ী সমস্ত বই পেয়ে যাচ্ছে হাতে। তবে এখানেই কিন্তু শেষ নয়। ছ’মাস পর একটি প্রতিযোগিতা আয়োজনেরও কর্মসূচি রয়েছে এই সংস্থার। যেখানে বই নেওয়া প্রতিজনকে সঠিক পদ্ধতিতে মূল্যায়ণও করা হবে। কোন বই থেকে তারা কি পড়েছে কতটা শিক্ষা গ্রহণ করেছে কিংবা বিশেষ কিছু ভালো লাগার উক্তি নিয়ে চলবে মৌখিক আলোচনা পর্ব। আর তার ভিত্তিতেই রয়েছে পুরস্কার প্রাপ্তি। কিশোর বাহিনীর এমন চমকপ্রদ প্রয়াসে এলাকাবাসী সত্যিই অভিভূত।
এতদিন কিশোর বাহিনী সংগৃহীত বইয়ের মাধ্যমে এই লাইব্রেরী সামলেছে। কিন্তু বইয়ের চাহিদা দিন দিন যেহারে বাড়ছে তাতে নতুন বই কেনার প্রক্রিয়া দ্রুতই শুরু করতে হচ্ছে। কিশোর বাহিনীর সদস্য কল্যাণ দে জানান,”শিক্ষা, স্বাস্থ্য আর সেবা এই তিনটির রক্ষাই হল আমাদের মূল উদ্দেশ্য।” তাঁদের হাত ধরেই আজ এলাকার ছেলেমেয়েরা মোবাইল টিভি ছেড়ে মেতেছে বই পাঠে। বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে কিশোর বাহিনীর এই প্রচেষ্টা সত্যিই প্রশংসনীয়।
Discussion about this post