বিপুল হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির, নতুন স্থাপনা নির্মাণ সহ নানা কারণে ঝোপঝাড় পরিস্কার, গাছপালা কাটা ও আবহাওয়ার বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কারণে উপকারী সব গাছ-গাছড়াও উজাড় হয়ে যাচ্ছে। বৃক্ষ, গুল্ম, বিরুৎ সবই হারিয়ে যাচ্ছে কোথাও দ্রুত, কোথাও ধীরে ধীরে। বিশ্বে নগরায়ণের প্রভাবে, যেখানে সেখানে গাছ কেটে ফেলার ফলে এই পৃথিবীর বুক থেকে ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে সবুজ। উষ্ণায়ন বৃদ্ধি পাচ্ছে গুরুতরভাবে। এই অবস্থায় দেখা যাচ্ছে নতুন আশার আলো। নতুন অরণ্য তৈরিতে আর পুরনো বনানীকে বাঁচাবার জন্য ‘ইঙ্গা’ গাছ সমাধান হতে পারে। এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক টোবি পেনিংটনের কথায়, এই গাছটি নাকি খুব বাজে মাটিতেও দ্রুত বেড়ে উঠতে পারে।
গত কয়েক বছরে ব্রাজিলের ইঙ্গা গাছ অরণ্য বিনাশের ক্ষেত্রে আশা জাগাচ্ছে। এক কর্মসূচিতে ইঙ্গা গাছ নিয়ে দেখা গেছে, ব্রাজিলের কৃষকরা তাঁদের জমিতে এই গাছের চাষ করে বেশ ভালোভাবেই জীবন যাপন করছেন। এই গাছ মাটিতে নাইট্রোজেন প্রবেশ করানোয়, তা উৎপাদনের স্তর অনেকখানি বাড়াতে সাহায্য করে। এমন এক কর্মসূচির ফলে সেখানকার কৃষক সম্প্রদায় জমি ব্যবসায়ীদের কাছে তাঁদের জমি বেচতে আর তেমন উৎসাহী হচ্ছেন না। ফলে আমাজনে চাষীর সংখ্যা এখন অনেক বেড়েছে। এই ইঙ্গা গাছ ‘আইস-ক্রিম বিন’ নামেও পরিচিত। যেখানে বৃষ্টিপাতের কারণে গাছের বৃদ্ধি ঘটে না, সেখানেও এই গাছ বেড়ে ওঠে। প্রায় ৩০০ প্রজাতির এই গাছের মধ্যে কড়াইশুঁটি জাতীয় গাছের শিকড় মাটিতে পৌঁছে বায়ুমণ্ডলে নাইট্রোজেন তৈরিতে দারুণ সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, দক্ষিণ আমেরিকার বাজারে এই গাছের ফলেরও দারুণ চাহিদা। এর পাতা গবাদি পশুর খাবারের জোগান দেয়, ডালপালা জ্বালানির কাজে লাগে। আমাজন অববাহিকা অঞ্চলে এই গাছের কাণ্ড সেই অঞ্চলের অরণ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করে বলে এই গাছকে ;অবিশ্বাস্য গাছ’ বলেও গণ্য করা হয়ে থাকে।
অধ্যাপক টোবি, যিনি প্রায় দু’দশক ধরে এই প্রকল্প নিয়ে কাজ করছেন তাঁর কথায়, “এই গাছ মাটিতে নাইট্রোজেন স্থায়ীকরণের পাশাপাশি, তার ঝরা পাতা দিয়ে জমিতে সার তৈরি করে জমিকে দারুণ উর্বর করে তোলে। গ্রিন গোল্ড ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ সলো ডি’সুজার মতে, এই গাছের চাষ বন্যপ্রাণীদের পক্ষে খুব উপযোগী। কারণ এই বন তাদের আবাসস্থল। তাই গবাদি পশুদের ক্ষেত্রে এই বন তাদের চারণভূমি হয়ে দাঁড়াবে, কারণ কার্বন সংগ্রহ করার ফলে এই গাছের খুব ভালোভাবে বৃদ্ধি ঘটবে এবং তাদের বাস্তু সমস্যা দূরীভূত হবে। তা ছাড়াও এই গাছ মাটিতে জলের স্তর বাড়িয়ে মাটির ক্ষয় রোধ করে মাটিকে উর্বর করে তোলে। ব্রাজিলে যেখানে প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ তাঁদের বেঁচে থাকার জন্য গবাদি পশুর উপর নির্ভর করেন, সেখানে এই গাছে তাঁদের অরণ্য বিনাশের হাত থেকে রক্ষার পাাপাশি তাদের রোজগার যোগাতেও সাহায্য করে। ভবিষ্যতে এই গাছটি সবুজায়নে বিপ্লব আনতে সক্ষম হবে।
Discussion about this post