জগদ্জননী দেবী দুর্গা। কখনও স্নেহশীলা মা, কখনও কন্যা আবার কখনও বা তেজোময়ী নারী। তবে এবার পুজো বেশ অন্যরকম। করোনার প্রকোপে জর্জরিত এই পুজোর সেই জৌলুস উধাও। তবু মায়ের আরাধনা কি আর বন্ধ রাখা যায়? তাই জাঁকজমকহীন ভাবেই চলছে পুজোর প্রস্তুতি। আর ঠিক এমন পরিস্থিতিতেই দেবী দুর্গা ধরা দিলেন এক পরিযায়ী শ্রমজীবী মা রূপে।
গত মার্চ থেকেই দেশ জুড়ে শুরু হয়েছিল লকডাউন। একাধিক সমস্যার পড়েছিলেন পরিযায়ী শ্রমিকদের দল। ভিনরাজ্যে বন্ধ উপার্জনের পথ। এদিকে লকডাউনের ফলে যানবাহন না চলায় নিজের রাজ্যে, নিজের বাড়িতে ফেরার উপায়ও তখন প্রায় বন্ধ। তাই পায়ে হেঁটেই বাড়ির উদ্দেশ্যে পাড়ি দিয়েছিলেন তাঁরা। কোলে ছোট্ট শিশু। তাকে সঙ্গে নিয়েই মাইলের পর মাইল হেঁটে চলেছিলেন পরিযায়ী মা। এর মধ্যে অনেকেরই আর ঘরে ফেরাটুকুও হয়ে ওঠেনি। রাস্তাতেই মারা যান বেশ কিছু পরিযায়ী মানুষ। তাঁদের সেই অসহায়তার রূপই এবার থিমের মাধ্যমে বড়িশা ক্লাবে ফুটিয়ে তুললেন শিল্পী।
দেবী প্রতিমাটি যেন এক পরিযায়ী মা। কোলে ছোট্ট এক শিশু। তাঁর পাশে রয়েছে আরও দুই মেয়ে ও এক ছেলে। তাদের হাতে ধরা হাঁস এবং পেঁচা। মূর্তিগুলিতে অসহায়তার ছাপ বেশ স্পষ্ট। ঠিক এমনভাবেই মা দুর্গা এবং তাঁর চার সন্তানের রূপ দিয়েছেন কৃষ্ণনগরের মৃৎশিল্পী শ্রী পল্লব ভৌমিক। তাঁর কথায়, লকডাউনের পর সংবাদ মাধ্যম থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের যন্ত্রণা এবং অসহায় অবস্থার কথা জেনেছিলেন তিনি। সেই ঘটনাই তাঁকে প্রভাবিত করেছিল এমন মুর্তি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে। তিনি আরও জানান, কোনও কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দাঁড়িয়েও এক মা কীভাবে সব কিছু সামলে এগিয়ে চলতে পারেন, সেই রূপই ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন তিনি। তবে মাটির বদলে মূর্তিটি ফাইবারের তৈরি। উচ্চতা প্রায় ১১ ফুট।
এবার বড়িশার পুরো মণ্ডপই যেন বর্তমান পরিস্থিতির এক খণ্ডচিত্র। মণ্ডপে থাকবে চাল, ডাল, আলুর বস্তা সহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সামগ্রী। ছেলে মেয়ে সঙ্গে করে সেই দিকেই যেন এগিয়ে চলেছেন দেবী। যা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে বর্তমানের অভাব এবং খাবারের হাহাকারকেই। সেই অভাব মেটেনি এখনও। অর্থনৈতিক অনটনকে সঙ্গী করেই দিন গুজরান হচ্ছে তাঁদের। বাস্তবে পরিযায়ীদের এই কঠিন লড়াইকেই তাঁর শিল্পের মাধ্যমে মানুষের দরবারে তুলে ধরলেন পল্লব বাবু। যা চোখে আঙুল দিয়ে বারবার একই প্রশ্ন করে যাচ্ছে, এর শেষ ঠিক কোথায়?
Discussion about this post