একজন শিল্পী চাইলে কী না করতে পারেন। কবিতা থেকে শুরু করে ছবি, সব কিছুতেই প্রাণ সঞ্চার করার ক্ষমতা থাকে তাঁদের। একজন কবি যেমন তাঁর কলম দিয়ে ঝড় তুলতে পারেন। আবার একজন চিত্রশিল্পী তেমনই তাঁর রং তুলি দিয়ে একটা ছবিকে জীবন দিতে পারেন। কিন্তু যদি শিল্পী হাতে রং না ধরেই ছবির ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলেন তাঁর শিল্পসত্তাকে, তখন? এমনই এক বিস্ময়কর প্রতিভার অধিকারী হলেন গ্রীক – আমেরিকান চিত্রশিল্পী মাইকেল পাপাদাকিস। যিনি রং তুলি পেন্সিল কোনোকিছুর সাহায্য ছাড়াই ছবি এঁকে চলেছেন শুধুমাত্র কাঠ, আতশকাচ ও সূর্যরশ্মি দিয়ে।
এই শিল্পী খোদ এক জায়গায় সাক্ষাৎকারে বলেন যে, তিনি একাধারে একজন পর্যটক ও শিল্পী হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সব জায়গায় পর্যটনে গেলে ব্যাগ ভর্তি ছবি আঁকার সরঞ্জাম নিয়ে যাওয়া এক কঠিন ব্যাপার। তাই তিনি নিজেই প্রকৃতিকে মায়ের শ্রেষ্ঠ আশীর্বাদ প্রাপ্ত সন্তানদের মধ্যে একজন। নিজের গুণ ও অসম্ভব প্রতিভা দিয়ে সূর্যরশ্মি ও কাঠ দিয়ে সৃষ্টি করলেন অদ্ভুত এই চিত্রকলা। এই শিল্পের পোশাকি নাম অবশ্য ‘হেলিওগ্রাফি’, যাঁর চাহিদা ও কদর গোটা বিশ্বে প্রচুর। মাইকেল তাঁর ওয়েবসাইটে লেখেন, ২০১৩ সালে কলোরাড গিয়ে তিনি সূর্যালোক নিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা শুরু করেন। এখানেই তিনি প্রথম লক্ষ্য করেন যে লেন্সের মধ্য দিয়ে সূর্যালোক ও আয়নায় প্রতিফলিত সূর্যালোক একেবারেই আলাদা। তিনি বুঝতে পারেন একই উৎস থেকেও সূর্যালোকের ধরণ একাধিক। এরপর তিনি কাঠের ক্যানভাসে সূর্যরশ্মিকে আতশকাচে ফেলেন। আতশকাচের সাহায্যে কাঠের ক্যানভাসকে পুড়িয়ে পুড়িয়ে বিভিন্ন ছবির আকারে তুলে ধরেন। ব্যাস এর পর থেকেই শুরু হয়ে যায় ক্যানভাসে অলোক রশ্মি ও শিল্পের মেলবন্ধন।
২০১৬ সালে মাইকেল পাপাদাকিস তাঁর কোম্পানি সানস্ক্রাইবস প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি তাঁর এই অনন্য প্রতিভার লাইভ শো ও করে থাকেন। বহু ইচ্ছুক শিল্পীদের তিনি হেলিওগ্রাফি শেখান। বলা বাহুল্য এই প্রতিভা সত্যিই বিরল ও অদ্ভুত। একটি ছবি সৃষ্টি করতে অনেক ধৈর্য ও পরিশ্রম প্রয়োজন হয়৷ বহু প্রচলিত একটি কথা ‘শিল্পীরা পাগল মানুষ হয়’ কোথাও গিয়ে যেন ঠিক। প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই এমন কিছু শিল্পসত্তা থাকে, শুধু আমরা হয় তো তা খুঁজে বের করতে পারিনা। নিজের প্রতিভাকে যাঁরা চিনে নিতে পারেন সেইসব মানুষ সত্যি সৌভাগ্যবান। তাই পাপাদাকিসের মতো মানুষ আমাদের সকলের প্রেরণা, কুর্নিশ তাঁদের মতো শিল্পীদের।
Discussion about this post