বিজ্ঞাপনে প্রায়ই শোনা যায়, “পুরনো জিনিস ঘরের সাজানো নষ্ট করছে? ওএলএক্সে বেচে দাও”, হ্যাঁ পুরনো জিনিস থেকে রেহাই পাওয়া এতটাই সহজ এখন। কিন্তু এই অবাঞ্ছিত সামগ্রীর মেলা!? হ্যাঁ, ঠিকই শুনছেন। মেলা, তাও আবার পুরনো, সেকেন্ড হ্যান্ড জিনিস, ভাঙাচোরা, ফেলে দেওয়া সামগ্রী নিয়ে! এসব শুনতে অবাক লাগবে ঠিকই। কিন্তু এমন মেলাই খোদ পশ্চিমবঙ্গের বুকে হয়ে আসছে বছরের পর বছর ধরে। ভাঙা, পুরনো, বাতিল জিনিসের এই জনপ্রিয় মেলা হয় দক্ষিন ২৪ পরগনা জেলার মথুরাপুর থানার অন্তর্গত দক্ষিন বিষ্ণুপুর গ্রামে। প্রতি বছর পৌষ সংক্রান্তিতে শুরু হয় এই মেলা, চলে প্রায় এক মাস ধরে।
এই মেলাতে প্রতি বছরই বিক্রি হয় শুধুমাত্র পুরনো ফেলে দেওয়া সামগ্রী। আর আশেপাশের অসংখ্য গ্রাম থেকে হাজার হাজার মানুষ আসেন এই ভাঙা মেলায়। কিনে নিয়ে যান বাতিল সামগ্রী। সেইসব অকেজো জিনিসগুলিকে তাঁরা নিয়ে যান সম্ভবত নিজেদের মতো করে ব্যবহার করার জন্য। তাঁদের মধ্যে নব্বই শতাংশ মানুষই হয়ত বায়োডিগ্রেডেবল আর নন-বায়োডিগ্রেডেবল বর্জ্য কী, খায় না মাথায় দেয় সেসব জানেন না। কিন্তু নিজেদের অজান্তেই তাঁরা এভাবেই সামিল হয়ে পড়ছেন পরিবেশ বাঁচানোর মিছিলে।
এই মেলায় পাওয়া যায় বাতিল কম্পিউটার, পুরনো টেবিল, ক্যালকুলেটর, বইপত্র, জামা কাপড়, খাট, ঘড়ি, জুতো, টিভি, ফোন, চার্জার, সাইকেল, ফ্যান, জলের পাম্প, রেফ্রিজারেটর, মাইক্রোওয়েভ, টোস্টার, সাউন্ডবক্স এমনকি ভ্যাকুয়াম ক্লিনারও। হাতলভাঙা প্যারামবুলেটর, রং চটা স্যুইচবোর্ড, কাঁচে দাগওয়ালা রিচার্জেবল টর্চ, ফুলদানি, ধূপদানি, আয়না থেকে বঁটি বা কাঁচি ছুরিও পাওয়া যায় এই মেলায়। একটু ঘুরে দেখালেই বোঝা যায়, যে বিক্রেতারা বাড়ি বাড়ি ঘুরে এসব ফেলে দেওয়া বাতিল, অথচ ব্যবহারযোগ্য জিনিসগুলি সংগ্রহ করেছেন।
বায়োডিগ্রেডেবল বর্জ্যের কথা তো শুনেই থাকবেন। সেসব বর্জ্য প্রাকৃতিক উপায়েই আবার ব্যবহারযোগ্য করে তোলা যায়। এই বর্জ্যের জন্য, প্রকৃতি বা পরিবেশের কোনও ক্ষতি হয়না। কিন্তু নন-বায়োডিগ্রেডেবল বর্জ্য? এইগুলি সম্পর্কেই তো বছরের পর বছর ধরে মানুষকে সাবধান করে এসেছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা। প্রকৃতি, পরিবেশ, বায়ুমন্ডল সবকিছুর জন্যই এই বর্জ্যগুলি মারাত্মক ক্ষতিকর। এগুলি প্রাকৃতিকভাবে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য হয়ে ওঠেনা। প্রকৃতিতে না মিশেই প্রকৃতির মধ্যে থেকে যায়, ঘটায় দূষণ। এই ধরণের সামগ্রীগুলিকেই পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করে নিয়ে বিক্রি হচ্ছে মথুরাপুরের ‘ভাঙা মেলা’য়। সেই কারণেই এই মেলা এত গুরুত্বপূর্ণ।
চিত্র ও তথ্যঋণ: শুভজিৎ
Discussion about this post