হিন্দু ধর্মের একটি মূল শাখা তন্ত্র-মন্ত্রের সঙ্গে জড়িত দীর্ঘকাল ধরে এবং মূলত ভারতবর্ষের পূর্বাঞ্চলেই এই তন্ত্রবাদের আধিপত্য তুলনামূলকভাবে বেশি। তন্ত্রবাদের মূল ভিত্তিই হল শক্তির উপাসনা, যার মূল আধার নারীকে ঘিরে। কিন্তু এই ‘তন্ত্রসাধনা’ , ‘গুহ্যবিদ্যা’ এসব থেকে বাঙালি গৃহস্থরা নিজেদেরকে সরিয়ে রেখেছিল একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। এই হিন্দু তান্ত্রিক দেবদেবীর সাথে প্রভূত সাদৃশ্য পাওয়া যায় বৌদ্ধ তন্ত্রের দেবদেবীর। যেমন উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্সের মেটেলি কালী পুজো। যেখানে ভুটানিদের হাতে শুরু কালী পুজো আজও হয়ে আসছে।
শুধু একটি নির্দিষ্ট জনজাতি নয় বাঙালিরাও আজ সামিল হয় সেই পুজোয়। প্রধানত বৌদ্ধ ধর্মের বজ্রযানীরাই তন্ত্রবিদ্যার সঙ্গে যুক্ত। তবে হিন্দু-বৌদ্ধ এই দুই ধর্মের তান্ত্রিক আচারের আদান-প্রদান কীভাবে আর ঠিক কবে ঘটেছে এ খানিক তর্কের বিষয়। অনেকের মতে হিন্দু ধর্মের যে দশ মহাবিদ্যার উল্লেখ তা বৌদ্ধ তন্ত্র থেকেই প্রাপ্তি। কোথাও কোথাও হিন্দু ও বৌদ্ধ তন্ত্রের সংমিশ্রণের চাক্ষুষ প্রমাণও মেলে। উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্সের একটি প্রাচীন জনপদ হল মেটেলি। তাদের এলাকাতেই অবস্থিত প্রায় দেড়শো বছরের পুরনো কালী মন্দির। মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত কালী প্রতিমার মধ্যেও খানিক অভিনবত্ব লক্ষ্য করা যায়। মনে করা হয় হিন্দু ধর্মের পাশাপাশি বৌদ্ধ ধর্মেরও ছোঁয়া আছে এই প্রতিমায়।
আরও পড়ুন শুধু তন্ত্র-মন্ত্রে নয়, আজও ভালোবেসে বুড়িমার পুজোয় সামিল হয় বালুরঘাট!
এই এলাকাতেই এক কালে ছিল দুটি ভুটানি লামার গুম্ফা। এখানে যে রীতিমতো তন্ত্র সাধনা হত এ ব্যাপারে অনেকেই নিশ্চিত। তবে গুম্ফার অস্তিত্ব আজ হারিয়ে গেলেও মন্দিরের অস্তিত্ব আজও বিদ্যমান। মন্দিরের প্রাচীন ও মূল বেদী ও পাওয়া যায় যেখানে খোদাই করা আছে ১২৭৮ বঙ্গাব্দ। এবং প্রতি দীপান্বিতা অমাবস্যায় পুজো করা হয় দেবীর। এককালে ১০১টি পশু বলির প্রচলন থাকলেও ২০২০ তে বলিপ্রথা বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে মেটেলি কালী পুজোকে ঘিরে এলাকাবাসীর মধ্যে উত্তেজনা ও বিশ্বাস এখনো অটুট। পুজোকালীন ভিড়ই প্রমাণ করে দেয় তাদের বিশ্বাস ও আবেগের কতখানি স্থান জুড়ে অবস্থান করছেন মেটেলি কালী।
Discussion about this post