প্রকৃতিকে উপভোগ করতে আমরা সদা প্রস্তুত। কিন্তু আমাদের উপভোগ যে প্রকৃতিকে ভোগ করা হয়ে উঠছে! তার বেলা? এ বিষয়ে জানতে গেলে আমাদের ছুঁয়ে আসতে হবে ইতিহাসের পাঁজর। ইতিহাস বলছে, প্রকৃতি কেড়ে নিতে পারে নির্মমভাবে। পৃথিবী এমন পাঁচটি ঘটনার সাক্ষী। মানুষ সৃষ্টির আগের জীবনও নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে ধাপে ধাপে। আর এই ঘটনাকে বলা হয়ে থাকে গণ বিলুপ্তি।
গত পাঁচটি বিলুপ্তি ধীর গতিতে প্রকৃতির খেলায় হলেও এবারের বিলুপ্তির জন্য কিন্তু আমরাই দায়ী। তবুও আমাদের উদাসীনতা কাটছে কি? ষষ্ঠ বিলুপ্তির কারণ এক কথায় পরিবেশ ধ্বংস। বিশ্বব্যাপী বন উজাড় করা, জলের অপব্যবহার, শক্তির অপব্যবহার ইত্যাদি। এর ভয়ানক পরিণাম হতে চলেছে কৃষির হ্রাস। যার ফলে চলে আসবে খাদ্য সংকট এবং জল সংকট। জলই জীবন তা সকলেরই জানা। তাই এর ফলে যা যা ক্ষতি সম্ভব সবটাই হতে পারে। আসলে জীব পরস্পর নির্ভরশীল। তাই একটি কীটের বিলুপ্তি মানে আসলে বাকি প্রজাতির জীবন সংকট।
গবেষণা বলছে, পাঁচটি গণ বিলুপ্তির পর শুরু হয়ে গিয়েছে ষষ্ঠ গণ বিলুপ্তি, ভবিষ্যতে হারিয়ে যেতে চলেছি আমরাও। যুগ যুগ ধরে ঘটতে থাকা এ ঘটনার শুরুর সময়টা ছিল ৪৮৫ মিলিয়ন বছর আগে, অর্ডোভিসিয়ান – সিলুরিয়ান যুগে। এরপর ক্রমাগত ৩৮৩, ২৫২, ২০১ এবং ৬৫ মিলিয়ন বছর পূর্বের ঘটনাগুলো আঁচড় কাটে পৃথিবীর বুকে। একে একে হারিয়ে যায় সামুদ্রিক বহু প্রজাতির জীব, কীট পতঙ্গের নানা প্রজাতি, বৈচিত্র্যময় স্থলজ জীবগোষ্ঠী ইত্যাদি। প্রথম বিলুপ্তির পর ক্রমান্বয়ে ডেভোনিয়ান, পারমিয়ান, ট্রয়াসিক যুগ পেরিয়ে আসে জুরাসিক যুগের বিলুপ্তি। পঞ্চমবারে ডাইনোসরের সাথে নিশ্চিহ্ন হয়েছে আরও নানা প্রজাতির প্রায় ৭৬% জীব। হিমবাহর তীব্রতা, আগ্নেয়গিরি এবং সাইবেরিয়ান ট্রাপসের মত বিষয়গুলি ছিল হারিয়ে যাওয়ার পেছনের রহস্য। তবে ষষ্ঠ বিলুপ্তি সে কথা বলছে না।
কিন্তু সমস্যার সমাধান তার কারণ খুঁজে পেলে। তাই এ ষষ্ঠ বিলুপ্তি রুখতে প্রজাতির জনসংখ্যার ট্র্যাক রাখা, ক্লোনিং এর কৌশল ব্যবহার করা ইত্যাদির মত ব্যাবস্থা নেওয়া যেতে পারে। আর সর্বোপরি সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পরিবেশের যত্ন নেওয়া হয়ে উঠতে পারে গণ বিলুপ্তি আটকানোর একটি ধাপ। এ বিষয়ে এটুকু বার্তাই যথেষ্ট নয় কারণ পরিবেশে জীবেদের নির্ভরশীলতা একটা বিরাট অধ্যায়। তাই টিকে থাকতে গেলে সচেতন হতে হবে এবং বিশদে জানতে হবে। সেই সাথে পরিবেশ রক্ষার ভার আমাদেরই বর্তায়। নিজেকে সর্বশ্রেষ্ঠ ভাবার অহংকারের পতন বুঝি এভাবেই নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে যায়!
Discussion about this post