নানা সংস্কৃতির মেলবন্ধনে সমৃদ্ধ আমাদের এই বাংলা। আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় বিয়ে এমন একটি অদৃশ্য বন্ধন, যা দুটি মানুষ তথা দুটি পরিবারকে বেঁধে রাখে এক সূত্রে। বিয়েকে ঘিরে বিশ্বের প্রতিটি কোণায় ছড়িয়ে বহু প্রাচীন রীতি নীতি। তবে বাংলাদেশের চাকমা জনগোষ্ঠীর মানুষদের বিয়েকে কেন্দ্র করে চিরাচরিত প্রাচীন রীতি অবাক করে দেয় সকলকে। তাদের নিয়মে পাকা কথার দিন পাত্রের বাড়ি থেকে পাত্রীর বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় মদ।
বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে মুলতঃ বসবাস চাকমা জনগোষ্ঠীর। তবে কেবলমাত্র পার্বত্য চট্টগ্রাম নয়, ভারতের ত্রিপুরা এবং অরুণাচল প্রদেশ রাজ্যেও এই আদিবাসী গোষ্ঠীর মানুষেরা বসবাস করেন। বিয়ের ক্ষেত্রে পাত্রীর বাড়িতে বিয়ের আগে পাত্র পক্ষের বেশ কয়েকবার যাওয়া বড়ই সাধারণ বিষয়। কিন্তু এই উপজাতি গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে নিয়ম আছে পাত্রের বাবা পাত্রীর বাড়িতে বিয়ের আগে মোট তিনবার যাবেন। পাত্রের বাবাকে এই তিনবারের প্রত্যেকবারই হাতে করে উপহার নিয়ে যেতে হবে। সেই উপহার যদি পাত্রীর পরিবারের মন মতো না হয় তাহলে সেখানেই বিয়ের কথা থেমে যাবে। আর প্রথম দু’বারের উপহার পছন্দ হলেই শেষবার অর্থাৎ তৃতীয়বার পাত্রের বাবা যখন পাত্রীর বাড়িতে যাবেন হাতে করে মদ নিয়ে। এটাই তাদের রীতি। এই মদ নিয়ে যাবার ঘটনাটিকে বলা হয় ‘মদপিলাং’।
প্রাচীনকাল থেকেই চাকমা আদিবাসী গোষ্ঠীর বিবাহে পরিবার দেখে শুনে বিয়ে দেওয়াকেই গুরুত্ব দেওয়া হত। তবে যুগের হাওয়ায় তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের চাকমা আদিবাসীদের মধ্যেও ছেলেমেয়েদের নিজের পছন্দ অনুযায়ী বিয়ের প্রচলনও শুরু হয়েছে। তবে সেক্ষেত্রে দু’পক্ষের পরিবারের সম্মতি সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। তাদের বিয়ের ক্ষেত্রে প্রচলিত আছে আরও একটি মজার নিয়ম। যদি কোনো ক্ষেত্রে মেয়ের পরিবার বিয়ে না মেনে নেয় তখন ছেলে এবং মেয়েটির পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করারও বিধান আছে চাকমা সমাজে।
তবে পালানোর কিছুদিন পরই তারা আবার ফিরে আসে বাড়িতে। তখনও যদি পরিবার না মেনে নেয় তারা আবার পালায়। এইভাবে পরপর তিনবার পালানোর পর এই জনগোষ্ঠীর নিজস্ব নিয়ম-কানুন অনুযায়ী পরিবার বাধ্য হয় তাদের বিয়ে মেনে নিতে। তবে কালের নিয়মে বিয়ের এই প্রাচীন রীতি ক্রমশ লুপ্ত হয়ে আসছে। তবে পরিবারের দেখাশোনা করে বিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে মেয়ের বাড়ি ছেলের বাবার তিনবার উপহার নিয়ে যাওয়ার রীতিটি এখনও প্রচলিত।
Discussion about this post