১৯৬০ সালের ৩০ অক্টোবর। কেমন ছিল সেদিনের আকাশ জানেন? সূর্যের তেজ কি সেদিন আরও তীব্রতর হয়েছিল? না, সেসব জানা নেই কারোরই। তবে প্রকৃতি সেদিন নিশ্চিত এক আগমনী বার্তায় জানান দিয়েছিল, যে তিনি আসছেন। ফুটবল বিশ্বের এক বড় উপহার। যিনি একটা সময় পর পরিচিত হলেন, ‘গড অফ ফুটবল’ নামে। দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা ফ্রাঙ্কো। এক হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান। কাজেই এটা পরিষ্কার, ফুটবল জগতের শ্রেষ্ঠ আসন পাওয়ার পথ তাঁর মোটেই সহজ ছিল না।
মাত্র ৮ বছরে বন্ধু গোয়ও কারিজোর দৌলতে দেখা করেন আর্জেন্টিনো জুনিয়ারসের কোচ কোরেঞ্জোর সাথে। লাস মালভিনাসের আর্জেন্টিনো জুনিয়ারস ট্রেন্ডিং গ্রাউন্ডে নতুন ফুটবলারের ট্রায়াল চলছে তখন। সেখানেই মারাদোনা দেখালেন তাঁর পায়ের আশ্চর্য যাদু। ট্রায়াল দেখতে আসা লোকেরা হতবাক হলেন, এমন অদ্ভুত ক্ষমতা চাক্ষুষ দেখে। কোচ কারিঞ্জো পরে তাঁর লেখা বই,’সেবাইতো মারাদোনা’-তে লেখেন, “১৯৬৯ এর বৃষ্টিভেজা শনিবারে আমার জীবনের একমাত্র মিরাকেলটি ঘটে। এক ৮ বছরের ছেলে বল নিয়ে এমন অবিশ্বাস্য কাজ করছিলো যা ওই বয়সের ধারের কাছে কেউ স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেনা।” ছোটখাটো আকৃতির মারাদোনাকে দেখে ক্লাবের কর্তাদের সন্দেহ, তিনি বয়স লোকাচ্ছেন। পরে ব্যক্তিগত কাগজপত্র দেখে সে সন্দেহ কাটে এবং ওই ক্লাবে যোগ দেন দিয়েগো।
শুরু হয় অনুশীলন পর্ব। প্রথমে সিনিয়র ম্যাচের বলবয় হিসেবে যুক্ত হন। তাই ম্যাচের হাফ টাইম হলেই বল নিয়ে হাজির হতেন মাঠে। বলটাকে পায়ে নিয়ে সেখান থেকে মাথায় তুলে আবার ঘাড়ে নামিয়ে শরীর দিয়ে গড়িয়ে পায়ের গোড়ালি। দর্শক ভীষণ উপভোগ করত ছোট্ট ছেলের এই কসরৎ গুলো। এমনকি একবার হাফটাইম শেষে খেলোয়াড়রা মাঠে ফিরলেও, দর্শক মারাদোনাকে আরও কিছুক্ষণ ম্যাজিক দেখানোর অনুরোধ জানায়। আর্জেন্টিনার জাতীয় চ্যানেলে দুটো বল নিয়েও খেলা দেখান। জনপ্রিয়তা শিখরে পৌঁছতে থাকে। মাঠে নেমে বলের সঙ্গে শুরু হয় বন্ধুত্ব, নিজের অসাধারণ ক্ষমতা ও অনুশীলন তাঁকে দ্রুতই এগিয়ে নিয়ে চলে। আসে একের পর এক জয় ও সম্মান। ধীরে ধীরে তিনিই হয়ে ওঠেন ফুটবল দুনিয়ার ভগবান।
গত ২৫ শে নভেম্বর। মাত্র ৬০ বছর বয়সেই অসংখ্য মনকে শূন্য করে চলে গেলেন তিনি। রয়ে গেল সেইসব খেলার স্মৃতি। রয়ে গেল মন মাতানো ড্রিবল। কিন্তু থাকলেন না আর সেই ইতিহাস স্রষ্টা মানুষটি।
Discussion about this post