ধরুন আপনার সামনে এমন একটা পুতুল রাখা যা দেখতে একেবারে মানুষের মতো কিন্তু আসলে তা একটা পুতুল। বিশ্বাস হবে? আবার ধরুন তাকে ছুঁতে গিয়ে দেখলেন তার হাত পা অবিকল মানুষের চামড়ার মত। কি এবারে পুতুল ভাবতে নিশ্চয়ই সন্দেহ হচ্ছে? ঠিক এরকমই এক ঘটনা দীর্ঘ ৯০ বছর ধরে ঘটে চলেছে মেক্সিকোয়। সেদেশের চিহুয়াহুয়া শহরের ‘লা পপুলার‘ দোকানটির ভেতর একটি কাঁচের বাক্সে রাখা কনের সাজে এক তরুণী পুতুল বা ম্যানিকুইন। পুতুলটির নাম, ‘লা পাসকুয়ালিটা’। শতাব্দী প্রাচীন কনের পোশাক বিক্রি করা দোকানটি এই পুতুলটির জন্যই বিখ্যাত। আবার এই পুতুলটিকে নিয়েই রয়েছে নানান অমীমাংসিত রহস্য।
শোনা যায় ১৯৩০ সাল নাগাদ এই দোকানটি আচমকাই মাস খানেকের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর ২৫ মার্চ দোকানটি আবার খোলে। তখন দেখা যায় সেখানে কাঠের পুতুলের বদলে রাখা হয়েছে এই বিশেষ ম্যানিকুইন। যা দেখতে অবিকল ওই দোকানের মালিকের মেয়ে পাসকুয়ালিটা এসপারজার মতো। এই পুতুলটি দোকানে আসার আগে পাসকুয়ালিটাকে মাঝেমধ্যে দোকানে আসতে দেখা যেতো। কিন্তু এই পুতুলটা আসার পর থেকে তাকে আর কেউ কোনদিনও দোকানে দেখেনি। এই পর্যন্ত তাও ঠিক ছিল। কিন্তু আসল রহস্য শুরু হয় যখন চোখে পড়ল এক ভয়ঙ্কর বিষয়। তার হাত, নখ, গায়ের পশম, চামড়ায় অসংখ্য ভাঁজ, ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি, এমনকি হাতের নীলচে শিরা পর্যন্ত অবিকল একজন মানুষের মতো যাকে জীবন্তই বলা চলে। বিশেষতঃ তার চোখ এমনই অদ্ভুত যা কোনভাবেই কোন পুতুলের হওয়া সম্ভব নয়। আর এখান থেকেই বাড়তে থাকে সাধারন মানুষের কৌতূহল। এই পুতুলটি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে মালিকপক্ষ ও কর্মচারীরা সবাই মুখে কুলুপ আঁটে। অনেকেই বলতে শুরু করেন এই ম্যানিকুইন আসলে পাসকুয়ালিটা এসপারজার মৃতদেহের মমি।
ইতিমধ্যে প্রকাশ্যে আসে আরও একটি ঘটনা। জানা যায় মাস খানেক আগে বিয়ের রাতে ব্ল্যাক-উইডো মাকড়শার কামড়ে মারা যান পাসকুয়ালিটা। অনেকে আবার বলতে শুরু করেন গভীর রাতে ওই দোকানে নাকি একজন ম্যাজিশিয়ান আসেন। যার সঙ্গে গভীর রাতে পাসকুয়ালিটাকে অনেকেই নাকি শহরের পথে ঘুরেতে দেখেন। আবার দোকানের বহু ক্রেতা এমনও বলেন যে, ওই ম্যানিকুইন নাকি চোখ ঘুরিয়ে তাদের গতিবিধি লক্ষ্য করে। আবার পাসকুয়ালিটা সকালে দোকানটি খোলার পরে একটি নির্দিষ্ট দিকে ঘুরে যায় সেদিকে তার বাবা বসতেন। তবে এ পুতুল সম্পর্কে সব থেকে চাঞ্চল্যকর তথ্য দেয় ওই পুতুলের পোশাক পরিবর্তনের দায়িত্বে থাকা কর্যচারী সোনিয়া বার্সিয়াগা। পুতুলটির সপ্তাহে দুই দিন করে পোশাক পরিবর্তন করা হয়। কিন্তু মোটেই তা অন্যান্য পুতুলের মত সর্বসমক্ষে নয়। পোশাক পরিবর্তনের জন্য পুতুলটির চারিদিকে পর্দা দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়। পোশাক পরিবর্তনের সময় সেখানে সোনিয়া ছাড়া অন্য কেউ প্রবেশ করতেও পারে না। সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সোনিয়া বলেন, “আমি প্রতিবারই যখন পাসকুয়ালিটার কাছে যাই। আমার হাত পা অসাড় হয়ে যায়। ঘামতে থাকি। পাসকুয়ালিটার চোখ, চুল, কান, ঠোঁট, হাত, পা, অস্বাভাবিক রকমের স্বাভাবিক। বুড়ো আঙুলের ছাপ দেওয়ার জায়গা, বুড়ো আঙুল আর তর্জনীর মাঝের ফাঁকের কুঁচকানো রেখা গুলি একেবারে সত্যিকারের মানুষের মতো। এমন কি পায়ে শিরাস্ফীতিও আছে। একেবারে আসল মানুষের মতো। আমার কিন্তু মনে হয় ও আসল মানুষ।”
৯০ বছর পেরিয়েও অজানা মেক্সিকোর ম্যানিকুইন ‘লা পাসকুয়ালিটা’র রহস্য। যার রহস্যভেদের চেষ্টা আজও করে চলেছেন সাংবাদিকরা। কিন্তু দীর্ঘ এতগুলো দশক ধরে কোন মমিকে কি একেবারে অবিকল রাখা সম্ভব? যদি এটি একটি পুতুলই হয়ে থাকে, তাহলে তা এতো নিখুঁত করে বানালেন কোন কারিগর? তিনি প্রকাশ্যে এলেন না কেন? আরও বিশেষ ব্যাপার হল পুতুলটিকে একদিনের জন্যও দোকান থেকে সরানো হয়নি। তাহলে তার পরিচর্যা কখন করা হয়? এরকম নানা প্রশ্নের অজানা উত্তর নিয়ে আজও মেক্সিকোর এই শহরের একপ্রান্তে দাঁড়িয়ে ওই রহস্য পুতুল ‘লা পাসকুয়ালিটা’। যার রহস্য ভেদ ২০২০-তে দাঁড়িয়েও সম্ভব হয়নি।
Discussion about this post