দুপুরের পাতে গরম ভাত আর মাছভাজা। ভেতো বাঙালি এতেই তৃপ্ত। মাছের রকমারি পদেই সারাবছর মজে থাকে এই খাদ্যরসিক জাত। আর অনুষ্ঠানের পাতে মাছের মাথাটি না থাকলে আভিজাত্যটাই কেমন যেন ফিকে পড়ে যায়। তাই মাছ ব্যবসায়ীদের রমরমা বাজার থাকে সারাটা বছর। মাছবাজারে তো প্রতি বাঙালি বাড়ির পা পড়েছেই। কিন্তু যদি মাছের মেলার কথা বলি, অধিকাংশ বাঙালির চোখ কপালে উঠবেই। হ্যাঁ, বাংলাদেশে মৌলভীবাজারের শেরপুরে কুশিয়ারা নদীর তীরেই হয় আজব এই মেলাটি। দু’শো বছর ধরে প্রতি পৌষসংক্রান্তিতে এই মেলাটি চলে আসছে। চলে নামীদামি ও দুর্লভ মাছের প্রদর্শনী। সেরা মাছের কপালে জোটে টিভি, ফ্রিজ কিংবা মোটরবাইক! তাই মেছুয়ারা ব্যস্ত হয়ে পড়েন এই সময়টা।
তবে আপনার পকেটটি গরম হওয়া চাই। পাঁচ হাজার টাকার নিচে মাছ কেনা একদমই যায় না। বড় বড় ব্যবসায়ীরা দর হাঁকেন মাছের। সেই অনুযায়ী ধনী ক্রেতাদের কপালেই জোটে মাছ। তবে সবাই মাছ কিনতেই যে হাজির হন মাছমেলায় এমনটা নয়। ঝুড়িতে সাজানো রূপোলি রঙের বাহার দেখতেও জমা হন কত জনতা। এছাড়াও গানের দল আসে বহু জায়গা থেকে। আঁশটে গন্ধ ছাপিয়ে যায় তাদের জমজমাটি সুরের খেলায়। আচারের দোকান, পানের দোকানেও গমগম করে প্রাঙ্গণ। মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা আসে এখানে মাছের পসরা নিয়ে। রুই, কাতলা, চিতল, বোয়াল, আইড়, বাঘাইড়, বরফ দেওয়া ইলিশ, আরও নাম না জানা কতশত মাছে ভরে ওঠে চারপাশ।
এই মেলার উৎপত্তি নিয়ে কৌতুহল থাকলেও নিরসনের উপায় নেই। তবে আগে এই মাছের মেলায় স্থানীয় বিভিন্ন হাওর-বাওরের, নদ-নদীর মাছ নিয়ে আসত জেলেরা। সিলেটের কুশিয়ারা, সুরমা, মনু নদী এবং হাকালুকি, টাঙ্গুয়া, কাওয়া দীঘি, হাইল হাওরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসে মৎস্য ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশের এই মন কাড়া মেলায় সময় হলে ঘুরে আসাই যায়।
Discussion about this post