ঢাকের বাদ্যি থেমে গেছে বেশ কিছুদিন হলো। এবার পালা আকাশ প্রদীপের। কারণ, দরজার কড়া নাড়ছে দীপাবলি। অর্থাৎ কিনা কালীপুজো চলে এসেছে। মনের আঁধার কেটে গিয়ে এবার দীপ জ্বলে ওঠার পালা। আর এই কালীপুজোয় দেবী পুজিতা হন নানান রূপে। তার শ্যামা বা চন্ডী রূপের কথা তো অনেকেরই জানা। কিন্তু মা কালীর আরেক অসামান্যা রূপ হলো মহিষখাগী।
শান্তিপুরের চৈতলপাড়া ও ভবানী পাড়ার মাঝামাঝি অবস্থিত মা মহিষখাগীর মন্দির। ইতিহাস বলছে, ১২৩৮ বঙ্গাব্দে এ মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়। পুজোটি আসলে ছিল এক ব্রাহ্মণ পরিবারের। যদিও সে পরিবার বর্তমানে শান্তিপুরে বাস করে না। তবে কালীপুজোর সময়ে তারা আসেন তাদের বাড়িতে। এ পুজো শুরু হয়েছিল রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের আমলে। পরে জনসাধারণ পুজোর উদ্যোগে সামিল হবার পর থেকে এই পুজো হয়ে উঠেছে সাধারণের পুজো। পুরনো মন্দির অতীত হয়ে গিয়ে গড়ে উঠেছে নতুন মন্দির।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, এক সময় পুজোয় উৎসর্গ করা হতো মহিষ। অর্থাৎ মহিষ বলি দিয়ে পুজো শুরু হতো মায়ের। সেই থেকেই এই মায়ের নাম মহিষখাগী। কোনো এক বছর পুজো হবার সময় পেরিয়ে যাওয়ায় বলি আর হয়ে ওঠেনি। সেই থেকেই মায়ের পুজোয় বলি প্রথা বন্ধ হয়ে যায়। আসলে মা তো, প্রাণ কেড়ে নিয়ে তৃপ্তি পাবেন কী করে! শোনা যায়, মায়ের পুজো চলে বিবাহ রীতি অনুযায়ী। মহালয়ার দিন পাটে সিঁদুর পরে। এরপর শুরু হয় প্রতিমা তৈরির কাজ। গোটা দুর্গা পুজোর সময় ধরে গড়ে ওঠে মা মহিষখাগীর প্রতিমা। উচ্চতায় এ মূর্তি প্রায় ১০ ফুট। মা পাটে ওঠার পরের দিন পালিত হয় দধিমঙ্গল। আর অমাবস্যায় পুজোর পর চলে বাসী বিয়ের পর্ব। এভাবেই কালীপুজোর দিনগুলোয় শান্তিপুর মুখর হয়ে ওঠে মা মহিষখাগীর আরাধনায়।
প্রচ্ছদ চিত্র ঋণ – তন্ময় প্রামাণিক
Discussion about this post