গত ২৭ মে আসামের তিনসুকিয়া জেলায় ওয়েল ইণ্ডিয়া লিমিটেডের বাগজান তৈলখনি থেকে পাইপ ফেটে লিকেজ শুরু হয়। বাতাসে মিশতে থাকে দূষিত গ্যাস। জলে, মাটিতে মিশতে থাকে দূষিত তেল। এই লিকেজ গত ১৩ দিন ধরে চলার পর গতকাল দুপুরে আগুন লাগে ওই তৈলখনি অঞ্চলে। যা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকে পার্শ্ববর্তী বসতি এলাকায়। আগুন ছড়িয়ে পরে ডিব্রু-সাইখোয়া ন্যাশানাল পার্ক ও মাগুরি জলাভূমির পার্শ্ববর্তী এলাকাতেও।
ব্রম্ভপুত্র, লোহিত(উত্তরে) এবং ডিব্রু নদীর (দক্ষিণ) মাঝে ৭৬৫ বর্গকিমি অঞ্চল জুড়ে অবিস্থিত ডিব্রু-সাইখোয়া ন্যাশানাল পার্ক ও বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ। এটি ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বনাঞ্চল। প্রায় ৩৬ টি প্রজাতির স্তন্যপায়ীদের এখানে বসবাস। এদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ রয়েল বেঙ্গল টাইগার, স্লথ বিয়ার, চাইনিজ প্যাঙ্গোলিন, হাতি, গাঙ্গেয় ডলফিন প্রভৃতি। এখানে স্থায়ী বা অস্থায়ী (মাইগ্রেটারি বার্ডস) ৪৪০টি প্রজাতি পাখির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসামের জাতীয় পাখি ও পৃথিবী জুড়ে বিলুপ্তপ্রায় হোয়াইট উইংড উড ডাক। এছাড়াও বেঙ্গল ফ্লোরিক্যান, হোয়াইট বেলিড হেরন, ব্ল্যাক ব্রেস্টেড প্যারোটবিলের মতো বিলুপ্তপ্রায় পাখিদের আস্তানা এখানে। অন্যদিকে মাগুরি বিল ও তার পার্শ্ববর্তী তৃণভূমিকে জলজ প্রাণের ভাণ্ডার বলা চলে।
গত ১৩ দিন ধরে বাগজান তৈলখনি (ডিব্রু-সাইখোয়া ন্যাশানাল পার্কের মাত্র ১০ কিমি দূরে অবস্থিত) এই দুই ইকো-সেনসেটিভ জোনে ভয়ঙ্কর দূষণ ছড়াচ্ছে। ধ্বংস হচ্ছে বাস্তুতন্ত্র। মারা যাচ্ছে প্রচুর বন্যপ্রাণ, জলজ জীব। পুরো জলাভূমিতে ভেসে বেড়াচ্ছে মৃত প্রাণ। যার মধ্যে আছে বিলুপ্তপ্রায় গাঙ্গেয় ডলফিন। একই অবস্থা স্থলভূমিরও। জলাভূমির পার্শ্ববর্তী যে তৃণভূমি সারাক্ষণ মেতে থাকত পাখির কলতানে, সেখানে নেমে এসেছে শ্মশানের স্তব্ধতা। হলুদ হয়ে গিয়েছে পুরো অঞ্চল। মারা যাচ্ছে বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদও। জলাভূমির উপরিতলে তৈরি হয়েছে তেলের স্তর। তেল ছড়িয়ে পড়ছে পার্শ্ববর্তী চাষের জমিতে। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে চাষবাস ও মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করা কয়েক হাজার পরিবার। এলাকাবাসীদের আরো ভয়, যে বিশাল অঞ্চল জুড়ে তেল ছড়িয়ে, সেখানেও এই আগুন ছড়িয়ে পড়লে প্রচুর ঘর-বাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে যাবে।
গত ১১ মে, ২০২০ কেন্দ্রীয় সরকারের পরিবেশ দপ্তর এই অঞ্চলে নতুন করে আরো ৭টি জায়গায় খননের ও পুরনো অংশে খনন বাড়ানোর অনুমতি দিয়েছেন। স্থানীয় অঞ্চলের মানুষ ও দেশজুড়ে পরিবেশ আন্দোলনের কর্মীরা প্রশ্ন তুলছেন এরকম একটা ইকো সেনসেটিভ জোনের ১০ কিমি অঞ্চলের মধ্যে কীভাবে খননের অনুমতি পায় ইণ্ডিয়ান অয়েল। তাদের দাবী অবিলম্বে এই অঞ্চলে খননের কাজ বন্ধ করতে হবে এবং নতুন করে খননের অনুমতি বাতিল করতে হবে। ইতিমধ্যেই যে ক্ষতি পরিবেশের হয়েছে তা কোন টাকার অঙ্কেই ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। তাই আর কোনও রকম ক্ষতি যাতে না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য তাঁরা জোরালো ভাবে দাবী জানাচ্ছেন।
প্রতিবেদক – সায়ন রায়
Discussion about this post