জয়রামবাটীর নাম শুনলে প্রথমেই যাঁর কথা মাথায় আসে, তিনি হলেন মা সারদা। তাঁর জন্মস্থান এখানেই। আর এই স্থানেই প্রথম মা সিংহবাহিনী জগদ্ধাত্রীর পুজো শুরু হয়। শাস্ত্র মতে দেবী পার্বতীর অপর একটি রূপ হল উমা হৈমবতী বা জগদ্ধাত্রী। ১৮৭৭ সালে সারদা দেবীর মা শ্যামাসুন্দরী দেবী এই পুজোর দীপ জ্বালান। শোনা যায়, এক কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন সারদা দেবী। সেই সময় তাঁর মা উপবাস রাখেন মা সিংহবাহিনীর নামে। আর সেই উপবাসে সন্তুষ্ট হয়ে শ্যামা দেবীকে কামারের রূপে দর্শন দেন জগদ্ধাত্রী। উপদেশ দেন একটা নির্দিষ্ট স্থানের মাটি দিয়ে ওষুধ তৈরি করে খাওয়ানোর। সেই উপদেশ অনুযায়ী ওষুধ বানিয়ে খাওয়ানো হলে সারদা দেবী সম্পূর্ণ সেরে ওঠেন। তারপর বহু স্বপ্নাদেশ পান শ্যামা সুন্দরী দেবী। তারপর থেকেই জগদ্ধাত্রী দেবীকে মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করে পুজো দেওয়া শুরু করেন। তারপর থেকেই জয়রামবাটীর জগদ্ধাত্রী পুজো বিশেষ প্রসিদ্ধ।
১৮৫৩ সালের ২২ ডিসেম্বর মা সারদা দেবী বাঁকুড়ার জয়রামবাটীতে এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বিয়ের পরেও বেশ কিছু সময় তিনি এখানেই থাকতেন। শুধু জগদ্ধাত্রী পুজোই নয়, দুর্গাপুজোও করতেন তিনি। এছাড়া ওই মন্দিরে রয়েছে মহামায়া, শ্রী চণ্ডী এবং দেবী মনসার মূর্তিও। মাটির দেওয়াল আর খড়ের চালের এই মন্ডপেই জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু হয়েছিল। সারদা দেবী প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে এই জগদ্ধাত্রী পুজো করেছেন। জয়রামবাটীতে জগদ্ধাত্রী পুজোয় প্রতিবছর আসতেন সারদা দেবী। এমনকি সারদা দেবীর দেহরক্ষার পরেও এই পুজোয় কোনও আঁচ পড়েনি। আজও এই মন্দিরে সম্পূর্ণ ভক্তির সাথে পূজিত হন মা সিংহবাহিনী।
এরপর ১৯২৩ সালে এই পুজোর দায়িত্ব নেয় বেলুড় রামকৃষ্ণ মিশন। মিশনের মহারাজ স্বামী সারদানন্দজীর উদ্যোগে জয়রামবাটীতে প্রতিষ্ঠা করা হয় মিশন। বছর কয়েক আগেই এই মন্দির খুব ক্ষতিগ্রস্থ হয়। যা পুনঃনির্মাণের মাধ্যমে ঠিক করা হয়। বহু বছর আগে জয়রামবাটির এক ব্যক্তি জগদ্ধাত্রী রূপে দর্শন করেন সারদা দেবীকে। তারপর থেকেই রামকৃষ্ণ মিশনের কিছু মন্দিরে জগদ্ধাত্রী রূপে পুজো করা হয় মা সারদাকে। কলকাতা থেকে ১০৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই মন্দিরে এখনও বহু ভক্তের ভিড় জমে এই পুজোর টানে। মন্দিরের সামনে এখনও রাখা আছে মা সিংহবাহিনীর দেওয়া সেই মাটি। সকলের বিশ্বাস, ওই মাটি স্পর্শ করলেই দূর হয়ে যাবে সব সমস্যা।
Discussion about this post