মনের কথা প্রকাশে চিঠি লেখা বা প্রেমপত্র নতুন কিছু নয়। যুগ যুগ ধরে বহু বিপ্লবী, কবি, রাজা-মহারাজারা নিজের প্রেয়সীদের মনের কথা জানাবার জন্য চিঠি লিখতেন। পুরনো দিনে চিঠিপত্রের মাধ্যমে প্রেম নিবেদন এখনকার আধুনিকতাকেও হার মানাবে। স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম নেতা সুভাষচন্দ্র বসুও একসময় তাঁর প্রেমিকাকে লিখেছিলেন প্রেমপত্র। সুভাষচন্দ্র বসু ও এমিলি শেঙ্কলের প্রেমের কথা হয়তো অনেকেই জানেন না।
১৯৩৪ সালে ভিয়েনাতে থাকাকালীন সময়ে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এমিলি শেঙ্কলের সাথে পরিচিত হন। এমিলি ছিলেন একজন অস্ট্রিয়ান তরুণী, যিনি একজন স্টেনোগ্রাফার এবং টাইপিস্ট হিসেবে কাজ করতেন। নেতাজি তখন ‘দ্য ইন্ডিয়ান স্ট্রাগল’ বইটি লিখছিলেন এবং এমিলি তার কাজে সাহায্য করতেন। কাজের সম্পর্ক ক্রমশ গভীর প্রেমের সম্পর্কে পরিণত হয়। নেতাজি এমিলিকে ‘বাঘিনি’ বলে ডাকতেন এবং তার বুদ্ধিমত্তা ও সাহসের প্রশংসা করতেন। এমিলিও নেতাজির দেশপ্রেম, আদর্শবাদ ও ব্যক্তিত্বের প্রতি আকৃষ্ট হন। ১৯৩৭ সালের ডিসেম্বরে নেতাজি ও এমিলি গোপনে বিয়ে করেন বলে ধারণা করা হয়। নেতাজি ও এমিলির প্রেমের প্রমাণ হিসেবে তাদের চিঠিপত্র, ছবি, এবং অন্যান্য দলিলের উপর নির্ভর করতে হয়।
১৯৩৬ সালে এমিলিকে লেখা সুভাষচন্দ্র বসুর একটি চিঠি পাওয়া গেছে। যার শুরু হয়েছিল এইভাবে – “মাই ডার্লিং, কখনও কখনও হিমবাহও গলে যায়। আমার মনে এখন অনেকটা সেরকমই অবস্থা। আমি যে তোমায় কতটা ভালোবাসি সেটা জানাতে এই চিঠিটা লেখা থেকে নিজেকে সম্বরণ করতে পারলাম না।” সুভাষচন্দ্র ওই চিঠিতেই লিখছেন – “আমি জানি না ভবিষ্যতে আমার জন্য কঈ অপেক্ষা করছে। হয়তো বাকি জীবনটা জেলের অন্ধকারেই কাটাতে হবে কিংবা আমাকে গুলি করে হত্যা করা হবে বা ফাঁসি দেওয়া হবে। কিন্তু যা কিছুই হয়ে যাক না কেন আমার সাথে, আমার সমস্ত হৃদয় জুড়ে তুমি থাকবে…যদি ভাগ্য তোমার থেকে আমাকে এ জীবনের মত আলাদা করে দেয় – পরের জন্মে তবু আমি তোমাকেই পেতে চাই।”
এমিলি শেঙ্কলকে লিখেছিলেন সুভাষচন্দ্র – “আমাকে এভাবে ভালোবাসার জন্য এবং ভালোবাসতে শেখানোর জন্য তোমায় অশেষ ধন্যবাদ।…আমি তোমার অন্তরে থাকা নারীত্বকে ভালোবাসি, তোমার আত্মার সঙ্গে আমার প্রেম। তুমিই আমার জীবনে প্রথম প্রেম।” একেবারে শেষে ওই চিঠিটা নষ্ট করে ফেলতে বলেছিলেন সুভাষচন্দ্র। কিন্তু এমিলি সেটাকে সযত্নে রেখে দিয়েছিলেন। বিয়ের সাত বছর আট মাসে এমিলি ও সুভাষ তিন বছরেরও কম সময় একসঙ্গে কাটিয়েছিলেন। প্রকাশ্যে কেউ কখনও জানেন নি তাদের বিয়ের কথা, প্রেমের কথা। কিন্তু তার মধ্যেই দুজনের প্রেমের চিহ্ন হিসেবে ১৯৪২ সালে নভেম্বরে জন্ম নেয় তাদের কন্যা অনিতা। মেয়েকে দেখার জন্য ১৯৪২ সালের ডিসেম্বরে ভিয়েনায় পৌঁছান সুভাষচন্দ্র। এরপরে সুভাষচন্দ্র বড় ভাই শরৎচন্দ্রকে লেখা একটি চিঠিতে তাঁর স্ত্রী ও কন্যার কথা জানান। তারপরে সুভাষচন্দ্র বসু সেই মিশনে রওনা হন, যেখান থেকে এমিলি বা অনিতার কাছে আর কোনওদিনই ফিরে আসেন নি।
Discussion about this post