৪৫ বছর কারাগারে কাটিয়ে ২০২৫ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পেলেন নাঈল বারঘূথি – ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক বন্দি। জীবনের বড় অংশ তাঁর কেটেছে ৮০টিরও বেশি কারাগারে, কেটেছে একটানা সলিটারি সেলে, ছেঁড়া কম্বলের নিচে। ফিলিস্তিনি বন্দিদের মধ্যে তিনি “আবু আল-নূর” নামে পরিচিত। এই বারঘূথিই ইসরায়েলি কারাগারে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে বন্দি থাকা ফিলিস্তিনি।
বারঘূথি ১৯৫৭ সালের ২৩ অক্টোবর ফিলিস্তিনের কুবার গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পরিবার ব্রিটিশ ও ইসরায়েলি দখলের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যুক্ত সংগ্রামী পরিবার। তাঁর বাবাকে ব্রিটিশ বাহিনী গ্রেফতার করেছিল এবং তাঁর কাকা ১৯৩৬ সালের আরব বিদ্রোহের সময় শহিদ হন। ১৯৭৮ সালে মাত্র ২১ বছর বয়সে ইসরায়েলি সেনা হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন বারঘূথি। ২০১১ সালে গিলাদ শালিত বন্দি বিনিময় চুক্তিতে তিনি মুক্তি পেলেও, ২০১৪ সালে ফের গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। কারাগারে তিনি ছিলেন সাহস ও সান্ত্বনার স্থান; ক্লান্ত, অসুস্থ, হতাশাগ্রস্ত বন্দিদের কাছে আশার প্রদীপ।
বছরগুলো কেটে গেছে, তাঁর বাবা-মা মারা গেছেন, দুই ভাইপো শহিদ হয়েছেন, এক ভাইপো আজীবন কারাদণ্ড ভোগ করছেন। শোনা যায় একদিন এশেল কারাগারে লোহার দরজার দিকে তাকিয়ে বারঘূথি বলেছিলেন, “এই দরজাটা দুইবার পাল্টানো হয়েছে, কারণ লোহা ক্ষয় হয়। কিন্তু আমাদের আত্মার শক্তির ক্ষয় হয় না।” তাঁর এই কথা ছড়িয়ে পড়েছিল বন্দিদের হৃদয়ে। নিজে বন্দি হয়েও প্রতিরোধের এক নিঃশব্দ ঘোষণা হয়ে তিনি রয়ে গেছিলেন বাকিদের মনে। আজ তিনি মুক্ত!
নতুন হামাস-ইসরায়েল বন্দি বিনিময় চুক্তির অংশ হিসেবে তাঁর মুক্তি কেবল একটি ব্যক্তিগত জয় নয়, এটি ফিলিস্তিনি জাতির জন্য প্রতিরোধ ও দৃঢ়তার অন্যতম প্রতীক হয়ে থাকবে চিরকাল। ৬৭ বছর বয়সে বারঘূথি আজ ফিরেছেন—শূন্য হাতে, কিন্তু তাঁর সেই অক্ষত আত্মা নিয়ে, মানসিক দৃঢ়তা নিয়ে। তাঁর ফেরা যেন একটি জীবন্ত ইতিহাসের প্রত্যাবর্তন।
Discussion about this post