বাংলার মাটি ছাড়া পৃথিবীর যে কোনো জায়গায় বাংলা ভাষা শুনলে বাঙালি যে আত্মতৃপ্তি পায় তা বলা বাহুল্য। এরকমই এক অভিজ্ঞতা আপনারও হবে যদি ঝাড়খণ্ডের হুন্ড্রু আসেন। যা জলপ্রপাতের শহর রাঁচি থেকে মাত্র ৪৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সুবর্ণরেখা নদীর ওপর সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট এই জলপ্রপাতের উচ্চতা ৩২২ ফিট। এটি পুরুলিয়া রাঁচি সড়কপথের সাথে সংযুক্ত। চওড়া পিচের রাস্তা ও ছোট বড় সবুজ চাদরে ঢাকা পাহাড় দেখতে দেখতে কখন যে আপনি পৌঁছে যাবেন সেটা খেয়াল করতে পারবেন না।
টিকিট কাউন্টার থেকে টিকিট কাটলেই প্রবেশাধিকারের অনুমতি পেয়ে যাবেন। দু – চারটে হোটেল দেখতে পাবেন। চাইলে দুপুরের খাবারের অর্ডার দিয়ে স্পটের উদ্দেশ্যে যেতে পারেন। ৭৪৭ টি সিঁড়ি বেয়ে যখন নীচের দিকে নামবেন, দেখবেন কিছু মানুষ সিঁড়ির দু’ধারে একমনে তাদের শিল্পকর্ম ফুটিয়ে তুলছেন কাঠ বা বাঁশের ওপর। এদের মধ্যে কেউ আবার ১৮ অনূর্ধ্ব কিশোর আবার কেউ তার সদ্যজাত বাচ্চাকে নিয়েই সারাদিন বসে রয়েছেন বিক্রির আশায়। কারও মাথার ওপর ছাউনি আছে কারও বা তাও নেই। এদের মধ্যে কেউ যদি আপনার সাথে বাংলাতে কথোপকথন করে, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক বাঙালি এখানে আসেন। তাই তারাও তাদের রুজি রোজগারের তাগিদে খোট্টা ভাষার সাথে সাথে বাংলাকেও আপন করে নিয়েছে।
এরপর আস্তে আস্তে যত নীচে নামবেন কানে আসবে অদেখা ঝরনার পড়ন্ত জলরাশির কলকল শব্দ। সিঁড়ি ও পাথুরে রাস্তা পেরিয়ে সামনে আসলেই যে নৈসর্গিক দৃশ্য দেখবেন তা আপনার সমস্ত হতাশা চিন্তাকে ভুলিয়ে দেবে সেটা নিশ্চিত। ঝরনা থেকে আগত জলরাশির জল জমে নীচে একটি জলাশয়ের সৃষ্টি করেছে। যার আশেপাশের বিভিন্ন আকৃতির পাথর ঘেরা স্থান জনপ্রিয় পিকনিক স্পট। আর ওপর থেকে পুরো জায়গাটি নজরবন্দি করতে হলে জিপ রাইডিং করতে পারেন। ব্রিটিশ আমলের আগে এই জায়গাটি ছিল লোকচক্ষুর অন্তরালে। স্থানীয় লোকজন ছাড়া ঘন জঙ্গলে ঘেরা দুর্গম স্থানটিতে কেউ সেরকম আসতো না। কথিত আছে, এই ঝরনার গা ঘেঁষে পাথরের ফাঁক ফোঁকরে ছিল এক মণিধারী নাগ নাগিন। আর হুন্ড্রু নামে এক ইংরেজ মণি হরণের লোভে এসে ঝরনা থেকে নীচে পড়ে মারা যায়। আর তার নাম অনুসারে জলপ্রপাতটির নামকরণ হয় হুন্ড্রু।
Discussion about this post