টেক্সাসের অস্টিনে ১৯৮৯ সালের ১৩ই মার্চ, আজকের দিনেই জন্মেছিলেন তিনি। রূপের দিক থেকে রীতিমত ভয়ংকর ও কুৎসিত দেখতে। তার মধ্যে একটি চোখও অন্ধ। তিনি লিজি ভেলাসকুয়েজ। রঙিন সভ্যতা যাঁকে স্বীকৃতি দিয়েছিল ‘বিশ্বের সবচেয়ে কুৎসিৎ মেয়ে’ হিসেবে। লিজি জন্মেছিলেন একটি বিরল রোগ নিয়ে। ডাক্তারি ভাষায় যার নাম ‘মারফানোয়েড প্রোজিরোয়েড লাইপোডিস্ট্রপি সিন্ড্রোম’। এটি প্রজেরিয়া জাতীয় একটি রোগ। এই রোগের ফলে তার শরীরের ওজন ঊনত্রিশ কিলোগ্রামের বেশি কোনওদিন বাড়তে পারেনি। ছোটবেলা থেকেই তাঁকে শুনতে হত সবার থেকে লুকিয়ে থাকতে বা নিজের মুখ ঢেকে রাখতে। এমনকি তাঁকে আত্মহত্যা করতেও উপদেশ দিয়েছিলেন বেশ কিছুজন। কিন্তু তিনি সেইসব কিছু কানেই তোলেননি। তখন থেকেই নিজের জীবনের চারটি লক্ষ্য স্থির করে ফেলেছিলেন লিজি। সেই লক্ষ্যগুলির মধ্যে প্রথম- একজন সুবক্তা হওয়া, দ্বিতীয়- নিজের লেখা বই প্রকাশ করা, তৃতীয়- স্নাতক অর্জন করা ও সব শেষে চতুর্থ- নিজের কেরিয়ার ও পরিবার তৈরি করা। তখন থেকেই নিজেকে একটু একটু করে ভবিষ্যতের দিকে গড়তে শুরু করেন তিনি।
লিজি টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জনসংযোগ বা কমিউনিকেশন বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করেন। ২০০৬ সালে সতেরো বছর বয়স থেকেই তাঁকে বলা অপ্রিয় কথাগুলির বিরূদ্ধে তিনি রুখে দাঁড়াতে শুরু করেন। তিনি একটি ইউটিউব চ্যানেল খোলেন। তাতে ‘হাউ ডু ইউ ডিফাইন ইয়োরসেল্ফ’ বলে একটি ‘মোটিভেশনাল ভিডিও’র মাধ্যমে নিজের বক্তব্য রাখেন। তাঁর সেই ভিডিওটি বহু মানুষ দেখেন এবং এগিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁকে আরও উৎসাহ দেন। সেই থেকেই গত সাত বছরে দুশোর এর বেশি ওয়ার্কশপে বক্তৃতা দিয়েছেন তিনি। কীভাবে অভিনবত্বকে স্বীকৃতি দিতে হয় বা বাধা-বিঘ্ন পেরিয়ে কীভাবে জীবনকে গ্রহণ করতে হয় এসব নিয়ে বলে চলেছেন তিনি। প্রতিকূল পৃথিবীতে ঘুরে দাঁড়িয়ে নিজেকে ভালোবাসতে হয়, এটি লিজির থেকে খুব ভালভাবে শেখা যায়।
২০১০ এ লিজি লেখেন তার আত্মজীবনীমুলক বই ‘লিজি বিউটিফুল’। এরপর ২০১২ সালে বেরোলো তাঁর দ্বিতীয় বই ‘বি বিউটিফুল, বি ইউ’। বইটি বিশ্বে ব্যাপক ভাবে সাড়া ফেলে দেয়। এই বইটির শুরুতে লিজি বলেন- “অ্যাপিয়ারেন্স নয়, মানুষকে মূল্যায়ন করতে হবে অর্জিত গুন দিয়ে।” আজ সুস্থ, স্বাভাবিক মানুষ হয়েও আমরা খুবই অল্পতে হতাশ হয়ে পড়ি। নিজের রূপ-চেহারা নিয়ে প্রায়ই হীনমন্যতায় ভুগি। আজকের এই রঙিন কর্পোরেট বিশ্বে নিজেকে অসহায় ভাবতে থাকি। গুণের চেয়ে কদর করি রূপের। অথচ লিজি জীবনে অসুস্থতার শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও হাল ছাড়েননি। তিনি ভেঙে পড়েননি বরং নিজের ছন্দে এগিয়ে চলেছেন। রূপ নয় বরং কারুর কাজই হল তার আসল পরিচয়। কোথাও গিয়ে লিজির এই জীবন দর্শন আমাদের এই শিক্ষা দেয় যে, ফেয়ারনেস ক্রীম আসলে সৌন্দর্য বাড়ায় না, বরং আমাদের নিজস্বতাকেই আড়াল করে দেয়।
ছবি সৌজন্যে : লিজি ভেলাসকুয়েজের অফিশিয়াল ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইল
Discussion about this post