শিশু মন বড়ই চঞ্চল, হাজারো বায়না, দুষ্টুমিতে ভরা। তবে বয়েসের তোয়াক্কা না করেই পরিস্থিতি যে সবাইকে তৈরী করে নেয়, তারই উদাহরণ কালনার বছর চোদ্দর রাত্রি মালিক। এই ছোট বয়সেই সে শিখে নিয়েছে জীবন-যুদ্ধে জেতার মন্ত্র। বাড়িতে অসুস্থ বাবার ওষুধ জোগাড়ের পাশাপাশি সংসারের দায়িত্ব পালনে টোটো চালানোর পথ বেছে নিয়েছে ছোট্ট রাত্রি। চালকের আসনে ছোটখাটো গড়নের এই কিশোরীকে দেখে বহু যাত্রীই বিস্মিত হন। সখের ছলে বাবার থেকে টোটো চালানো শিখেছিল রাত্রি। তবে ভাগ্যের পরিহাসে এই টোটোই হয়ে উঠেছে তার লড়াইয়ের অন্যতম হাতিয়ার।
কালনা শহর লাগোয়া, হাটকালনা পঞ্চায়েতের গোয়ারায় এলাকায় বাড়ি রাত্রির মালিকের। মাটির দেওয়াল আর টালির চালার একচিলতে ঘরে অসুস্থ বাবা, মা, ছোট্ট ভাই ও বয়স্ক ঠাকুমাকে নিয়ে সংসার ছোট্ট রাত্রির। কালনার কৃষ্ণদেবপুর বালিকা বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী সে। আর পাঁচটা ছেলে-মেয়ের মত লেখাপড়া শিখে জীবনে বড় হওয়ার স্বপ্ন ছিল রাত্রির। তবে পরিস্থিতির চাপে তার সেই স্বপ্ন আজ ভেঙে চুরমার। এই ছোট বয়সেই টোটোর পাশাপাশি সংসারের স্টিয়ারিং ও নিজের হাতে তুলে নিয়েছে সে।
রাত্রির বাবা মদন মালিক পেশায় ছিলেন টিভি মেকানিক। তবে করোনার সময়ে প্রথম লকডাউনে ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন তিনি। মস্তিষ্কে চাপ পড়ায় টিভি মেরামতির কাজ ছেড়ে টোটো চালাতে শুরু করেন মদন। কিন্তু দ্বিতীয়বার স্ট্রোকে শরীর অকেজো হয়ে যায় মদনের। যার ফলে টোটো চালানোর ক্ষমতাই হারিয়ে ফেলেন সে। সেই সময় সংসার সামাল দিতে রাত্রির মা পরিচারিকার কাজ শুরু করেন। কিন্তু সামান্য পারিশ্রমিকে অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসার খরচ ও সংসার চালানো সম্ভব হচ্ছিল না তার। সংসারের হাল ধরতে টোটো চালানো শুরু করে রাত্রি। অসুস্থ বাবাকে পাশে বসিয়ে শহরে টোটো চালায় রাত্রি। পাশে বসে মেয়েকে পরামর্শ দেন বাবা মদন মালিক। ছোট্ট রাত্রিকে নিয়ে দিনভর চিন্তায় থাকেন রাত্রির মা। তিনি বলেন, “ওই এসটিকেকে রোডে কী ভাবে গাড়ি চলে তা তো জানি। বাবা-মেয়ে না ফেরা পর্যন্ত আতঙ্কে থাকি। তবে ভয়কে জয় করে সাহসী রাত্রির জবাব, “টোটো না-চালালে তো সংসারটা চলবে না। দিনে কমবেশি ২০০ টাকার মতো আয় হয়। সেই টাকাতেই কোনওরকমে সংসার, বাবার চিকিৎসার খরচ চলে। আর বেঁচে থাকা তো ঈশ্বরের হাতে। তাই প্রথমটাকেই বেছে নিয়েছি।”
অসুস্থ বাবাকে পাশে বসিয়ে শহরে টোটো চালায় রাত্রি। পাশে বসে মেয়েকে পরামর্শ দেন বাবা মদন মালিক। ছোট্ট রাত্রিকে নিয়ে দিনভর চিন্তায় থাকেন রাত্রির মা। তিনি বলেন, “ওই এসটিকেকে রোডে কী ভাবে গাড়ি চলে তা তো জানি। বাবা-মেয়ে না ফেরা পর্যন্ত আতঙ্কে থাকি। তবে ভয়কে জয় করে সাহসী রাত্রির জবাব, “টোটো না-চালালে তো সংসারটা চলবে না। দিনে কমবেশি ২০০ টাকার মতো আয় হয়। সেই টাকাতেই কোনওরকমে সংসার, বাবার চিকিৎসার খরচ চলে। আর বেঁচে থাকা তো ঈশ্বরের হাতে। তাই প্রথমটাকেই বেছে নিয়েছি।”
Discussion about this post