পতিব্রতা নারীদের গল্প আমরা অনেক শুনি। তবে কিছু গল্পের থুড়ি জীবন সংগ্রামে যুদ্ধরত নারীরা শুধু সংসারেরই নয়, সমাজেরও খেয়াল রাখেন। প্রতিনিয়ত সেরকমই এক সংগ্রামের নজির গড়ছেন সুপ্রীতি। হুগলী জেলার দাদপুর ব্লকের রাজহাট গ্রামের মেয়ে। হ্যাঁ, তার জীবন সংগ্রামের গল্পে দেবী বৈ অন্য চরিত্রে তাঁকে মানায় না!
বহু বছর ধরে নানা সংগ্রামের মোকাবিলা করে নারীরা আজ এ সমাজে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। পুরুষদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রক্ষা করছে ঘর এবং বাইরে। তেমনই একজন মেয়ে হলেন এই সুপ্রীতি। পুরুষ শাসিত সমাজে ‘ফ্লিপকার্ট’ নামক একটি ই- কমার্স সংস্থায় ‘ডেলিভারি গার্ল’ হিসেবে নিযুক্ত সুপ্রীতি। সারাদিন বাড়ি বাড়ি পার্সেল পৌঁছে দিয়ে বেলা শেষে যে উপার্জন হয় তাই দিয়ে সংসার এবং ছেলে – মেয়েদের পড়াশোনার খরচ সামলান সুপ্রীতি। শুধু তাই নয়, রাতে ক্লান্ত শরীর নিয়েই সংসারের কাজ সেরে গ্রামের দুঃস্থ ছেলে-মেয়েদের বিনামূল্যে পড়ান।
আর পাঁচটা মেয়ের মত পুজোর দিনগুলো সাজগোজ করে পরিবারের সাথে ঠাকুর দেখে বাড়ি ফিরতে পারত সুপ্রীতি। কিন্তু না, টানাটানির সংসারে, শারদীয়া উৎসবেও ছুটি নেই তার। পুজোর দিনগুলোতেও বাড়ি বাড়ি ডেলিভারী দিয়েছেন পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে। পড়াশুনা শিখেছেন, অঙ্কে মাস্টার্স। সেটাও খুব দারিদ্রতার মধ্যেই। বাবা রিক্সা চালাতেন, এখন পরিবার বলতে স্বামী,শ্বশুর, শাশুড়ি আর দুই সন্তান। তবে এখানেই শেষ নয়, পুজোতে পরিবারের খরচ সামলে যেটুকু টাকা বাঁচিয়ে ছিলেন তাতে গ্রামের গরিব শিশুদের নতুন জামাকাপড়ও কিনে দিয়েছেন এই ‘ডেলিভারী দিদি’।
ফ্লিপকার্ট কোম্পানির মত সংস্থায় প্রচলিত ছক ভাঙা এহেন কাজের জন্য ভালোই প্রশংসা কুড়িয়েছেন এই দিদি। এইরকম দিদিদের কথা আরও বেশি করে ছড়িয়ে পড়ুক। আরও কিছু মানুষ জীবন সংগ্রামে হার না মেনে শেষ লড়াইটা হাসি মুখে লড়ে যাক সুপ্রীতিদের মতই। তাহলেই এরকম হাজার ‘সুপ্রীতি’রা সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচার রসদ খুঁজে পাবে।
Discussion about this post