লাইব্রেরি বলতে আমাদের চোখের সামনে যা ভেসে ওঠে তা হল সারি সারি তাকে সাজানো অজস্র বইয়ের ভাণ্ডার। মানুষের হাজার বছরের লিখিত-অলিখিত সব ইতিহাস উঁকি দেয় সেসব বইয়ের পাতার ফাঁকে। বহু বইপ্রেমীদের কাছে লাইব্রেরি এক দুর্লভ ঐশ্বর্য্যের খনি ছাড়া আর কিছু তো নয়ই। কিন্তু এই চিরাচরিত ভাবনার বাইরে গিয়ে যদি বেশ কিছু ব্যবহৃত দৈনন্দিন জিনিসের লাইব্রেরির কথা ভাবতে বলা হয় তাহলে? কী! আজগুবি লাগছে তো? না আজগুবি নয়। চলুন, লন্ডনের এমনই এক লাইব্রেরির সঙ্গে আজ পরিচয় করা যাক।
লন্ডনে লাইব্রেরিটি ‘লাইব্রেরি অফ থিংস’ নামেই অধিক পরিচিত। ২০১৬ সালের কথা। লন্ডন নিবাসী রেবেকা ট্রেভালিয়নের হাত ধরে শুরু হয়েছিল ‘রিসাইকেল মুভমেন্ট’। লাইব্রেরিটি এই আন্দোলনেরই নিদর্শন। আন্দোলন শুরু হবার পিছনে যথেষ্ট কারণ ছিল। রেবেকা লক্ষ্য করেছিলেন লন্ডন তথা ইউরোপের মানুষদের মধ্যে পুনর্ব্যবহারের প্রবণতা গোটা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে কম। কোনো ইলেকট্রনিক যন্ত্র বা গার্হস্থ্য ব্যবহারের সামগ্রী খারাপ হলে, সাধারণত তা সারানোর কথা ভাবেন না ইউরোপীয়রা। তাই সেই সামগ্রীগুলোর ঠাঁই হয় আবর্জনার স্তূপে। এতে যে শুধু আবর্জনার পরিমাণ বাড়ে তাই নয়, উপরন্তু পরিবেশের ভারসাম্যতাও নষ্ট হয়।
এই অপচয় ও দূষণ রোখার লক্ষ্যেই ‘লাইব্রেরি অফ থিংস’-এর প্রতিষ্ঠা। তবে দুটি অসাধারণ বৈশিষ্ট্য এই প্রতিষ্ঠানটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। প্রথমত , ল্যান্ডফিল বা আবর্জনার স্তূপ থেকে প্রাপ্ত পুনর্ব্যবহারযোগ্য জিনিসপত্র দিয়েই সযত্নে সাজানো হয়েছে এই লাইব্রেরিটি। আর দ্বিতীয়ত, লাইব্রেরি থেকে কিছুদিনের জন্য পাঠকরা যেমন বই বাড়িতে নিয়ে আসতে পারে, তেমনি স্বল্প মূল্যেই সপ্তাহ খানেকের জন্য সেইসব সামগ্রী ভাড়া নিতে পারেন যে কেউ। সাউন্ড সিস্টেম থেকে ওয়াশিং মেশিন- গৃহস্থের প্রায় সমস্ত সামগ্রীরই হদিশ মিলবে এর ক্যাটালগে।
প্রাথমিকভাবে ক্রাউডফান্ডিংয়ের মাধ্যমেই শুরু হয়েছিল এই লাইব্রেরি। তারপর ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পেয়েছে ‘লাইব্রেরি অফ থিংস’। বর্তমানে প্রায় ৫ হাজারেরও বেশি সদস্য রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের, সঙ্গে গোটা লন্ডন জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে ৬টি শাখাও। মূলতঃ মহিলাদের দ্বারাই পরিচালিত হয় এই অভিনব লাইব্রেরি। পরিবেশকে সুরক্ষিত রাখার পাশাপাশি দেশবাসীর আর্থিক সাশ্রয়ের পথটাও মসৃণ করায় ভুরি ভুরি প্রশংসাও কুড়িয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
Discussion about this post