গ্লোবালাইজেশনের ফলে আধুনিক পৃথিবীতে বাড়ছে দূষণ ও গড় তাপমাত্রার পরিমাণ। উষ্ণায়নের ফলে একদিকে যেমন গলছে হিমবাহ অন্যদিকে তেমনই বদলে যাচ্ছে গড় বৃষ্টিপাত ও মৌসুমী বায়ুর সময়। এর ফলেই বিপন্ন প্রাকৃতিক সম্পদ ও জীববৈচিত্র্য। তবে ইদানীং গত কয়েক মাস ধরে সারা পৃথিবী জুড়ে করোনা ভাইরাসের দাপট থেকে বাঁচতে চলছে লকডাউন। ফলে মানুষ আজ ঘরবন্দী। শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান থেকে রাজনৈতিক ক্ষেত্র, অফিস কাছারি থেকে কলকারখানা, জলপথ-বিমানপথ-সড়কপথ বা যে কোনও গণ-পরিবহন, বন্ধ আজ সবই। ফলতঃ নিজের শরীর থেকে দূষণের ক্ষত সারিয়ে প্রকৃতি নিজেই যেন তার ভারসাম্য রক্ষা করতে নেমেছে। ওয়ার্ল্ড মিটিওরলজিকাল অর্গানাইজেশনের মতে আস্তে আস্তে আবার সজীব হয়ে উঠছে পৃথিবী। সুস্থ হয়ে উঠছে ওজোন স্তরও। এই পরিস্থিতিতে সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে যে বন্য প্রাণীরাও নিশ্চিন্তে রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। মানুষ যখন আজ ঘর বন্দী, তখন বন্য প্রাণীগুলোও বাঁচতে পারছে নিজেদের খেয়াল-খুশি মত।
ঠিক এই অবস্থায় প্রকৃতিকে দূষণ মুক্ত রাখার জন্য রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তাপস পাল একটি অভিনব উদ্যোগ নিয়েছেন। কবি সুকান্ত ভট্টাচাৰ্যের লেখা “প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল/এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি/নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার”। এই লাইনগুলোকে বাস্তবের রূপ দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি। গত ১ এপ্রিল দিল্লীর রাষ্ট্রপুঞ্জের, প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, ব্রাজিলের প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, জলবায়ু বিশেষজ্ঞ গ্রেটা থানবার্গ, সুইডেনের ‘ফ্রাইডে ফর ফিউচার’, রাহুল গান্ধী এবং সোনিয়া গান্ধীর কাছে এক আবেদন পত্র পাঠান তিনি। পত্রটির মুখ্য বক্তব্য ছিল ‘লকডাউন ফর ক্লাইমেট’। ‘ডেইলি নিউজ রিল’য়ের সঙ্গে এক কথোপকথনে পরিবেশ গবেষক তাপস বাবু জানান, “প্রতি বছর পৃথিবীব্যাপী একদিন বা এক সপ্তাহের জন্য মানব সভ্যতার ক্ষতিকারক কাজগুলি বন্ধ করা দরকার। পৃথিবী যেন তাজা অক্সিজেন নিতে পারে এবং এই সমসাময়িক জলবায়ুর সাথে নিজেকে সামঞ্জস্য করতে পারে। এটি প্রমাণিত হয়েছে যে মহামারী কোভিড-১৯ লকডাউন সময়ের কারণে আমাদের জলবায়ু কিছুটা সুস্থ ও সতেজ হয়েছে। আমরা সারা বছর অনেক দিবস উদযাপন করি, তাই যদি একদিন বা একটি সপ্তাহ জলবায়ুর জন্য উদযাপিত হয় তবে আমরা এক সুস্থ পৃথিবীতে বসবাস করতে পারব।”
তাপস বাবুর এই উদ্যোগে পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন তাঁর সহকর্মী সহ আরও অনেকেই। এই প্রচেষ্টাকে সাধুবাদও জানিয়েছেন তাঁরা। প্রকৃতিকে বাঁচাতে তাই, “পরিবেশ আপনার, প্রকৃতি নয়” নিজের এই উক্তিকে বাস্তবায়িত করে নতুন এক ভোরের লক্ষ্যে লড়ে যাচ্ছেন রায়গঞ্জের অধ্যাপক ড. তাপস পাল।
Discussion about this post