মানব সমাজে কতই না বৈচিত্র্য, আর কতই না বৈচিত্র্যময় মানুষের ভাষা। পৃথিবীতে সাত হাজারের ও বেশি ভাষা ব্যবহৃত হয়। কিন্তু আপনি কি টার্কির ‘কুস দিলি’ ভাষার কথা জানান? এ ভাষা হল পাখির মত শিস দেওয়া, বা ‘বার্ড ল্যাঙ্গুয়েজ’। এই ভাষায় কথা বলা মানুষেরা পাখির মত শিস দিয়ে মনের ভাবের বিনিময় করেন।
তুরস্কের উত্তর গিরেসুন প্রদেশের মনোরম পন্টিক পর্বতমালার এক গ্রাম কুস্কোয়। সেই গ্রামের ৪৬ বছর বয়স্ক মুয়ায়েজ হলেন এই ‘কুশ দিলি’ ভাষায় শিস দেওয়া অন্যতম সেরা মহিলা। সারা গ্রাম জুড়ে বিশাল চা ক্ষেত এবং হেজেলনাট বাগান, পাখির গান আর তার সাথে মুয়ারেজের শিস ― সেখানে গেলে আপনার এই অভিজ্ঞতাই হবে। যেমন হয়েছিল তুরস্কের রাষ্ট্রপতি তায়িপ এরদোগানের। ২০১২ সালে এরদোগানের গ্রাম সফরের সময় মুয়ারেজ তাঁকে এই ভাষায় শুভেচ্ছা জানান এবং গর্বের সঙ্গে শিস দিয়ে বলেন, “আমাদের গ্রামে স্বাগতম!”
কুস দিলি বা ‘বার্ড ল্যাঙ্গুয়েজ’ সম্পূর্ণ তুর্কি শব্দভাণ্ডারকে বৈচিত্র্যময়-পিচ ফ্রিকোয়েন্সি এবং সুরের রেখায় রূপান্তরিত করে। বহু দূর পর্যন্ত এই আওয়াজ শোনা যায় তাই কৃষকেরা এই ভাষা ব্যবহার করেন। তা ছাড়া পশুদের সঙ্গে ভাব জমাতেও সুবিধা হয়। বর্তমানে এই ভাষায় কথা বলা মানুষের সংখ্যা ১০,০০০। তবে বর্তমান প্রযুক্তির ব্যবহারের সাথে সাথে এই ভাষায় কথা বলা মানুষের সংখ্যা কমছে। মিসেস কোসেকের মতে, “এটা আমাদের ঐতিহ্য। এই ভাষাকে আমাদের রক্ষা করতে হবে এবং এর ব্যবহার চালিয়ে যেতে হবে।” মিসেস কোসেক ছোটবেলায় তাঁর বাবার সঙ্গে ক্ষেতে কাজ করার সময় এই ভাষা শেখেন। তিনি তাঁর সন্তানদের এই ভাষা শিখিয়েছেন। তাঁর তিন সন্তানই এই ভাষা বুঝতে পারে, কিন্তু শুধুমাত্র তার মধ্যম কন্যা, ১৪ বছর বয়সী কাদের কোসেক এই ভাষায় কথা বলতে পারে এবং তুরস্কের জাতীয় সঙ্গীতের বাঁশি বাজাতে পারে।
পৃথিবীর আরও কয়েকটি দেশে এই ধরনের শিস বাজানো ভাষা আজও বিদ্যমান। একই ধরনের যোগাযোগের উপায় ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জ, গ্রীস, মেক্সিকো এবং মোজাম্বিকে ব্যবহার করা হয় বলে জানা যায়। বিজ্ঞানীদের বহুদিন ধরেই ধারণা ছিল যে ভাষার জন্য দায়ী মূলত মস্তিস্কের বাম ভাগ, এবং সুর, ছন্দ এবং গান ডান ভাগে নিয়ন্ত্রিত হয়। কিন্তু কুস্কোয় পরিচালিত বায়োসাইকোলজিস্ট ওনুর গুনতুরকুন সম্প্রতি একটি গবেষণা করে বের করছেন যে মস্তিষ্কের উভয় ভাগ দিয়ে শিস ভাষা পরিচালিত হয়। ২০১৭ সালে জাতিসংঘের শিক্ষা, বৈজ্ঞানিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের তালিকায় ‘বার্ড ল্যাঙ্গুয়েজের’ উল্লেখিত হয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন যে মোবাইল ফোনের ক্রমবর্ধমান ব্যবহার “এই ভাষার জন্য একটি প্রধান হুমকি”। কুস্কোয় গ্রামে প্রতি বছর ‘বার্ড ল্যাঙ্গুয়েজ‘ আর্ট ও কালচারাল ফেস্টিভ্যাল আয়োজিত হয়।
Discussion about this post