চারিদিকে জঙ্গল, বিশাল বড় পাহাড়, চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বিশাল আকারের পাথর। আর এই গা ছমছমে জঙ্গলেই রয়েছে এক অদ্ভুত গুহা। আর সেই গুহার ভিতরেই প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয় দুর্গা পুজো। শোনা যায়, এক গুহা মানব সাধু নাকি সেই পুজোর প্রবর্তন করেন। বাংলার দুর্গা পুজোর তালিকায় এই গুহার দুর্গা পুজোর অবস্থান তেমন উজ্জ্বল না হলেও, এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এক রোমহর্ষক ইতিহাস। বেলপাহাড়ির গহীন অরণ্যবেষ্টিত এই স্থানটির নাম লালজল। অধুনা ঝাড়গ্রামের পর্যটন মানচিত্রে, এই লালজল একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে প্রতিবছর অনেক পর্যটক এখানে যান। কিন্তু, এই গুহার দুর্গা পুজোর ইতিহাসটা এখনো অনেকেরই অজানা।
লালজল অঞ্চলের ওই গুহা বর্তমানে আদিম মানুষের গুহা নামে পরিচিত। পাহাড়ের উপরে রয়েছে এই গুহা। এখানে নাকি এক সময় বেশ কিছু হাড় উদ্ধার করা হয়েছিল। সঙ্গেই মিলেছিল, আদিম মানুষের ব্যবহৃত একাধিক দ্রব্য। কথিত আছে, এই গুহায় নাকি মা দুর্গার মূর্তিও ছিল। স্থানীয়দের কাছে শোনা যায়, এক সাধু এই গুহায় বসে ধ্যান করতেন। আর পাশে থাকত তার হিংস্র বাঘ। প্রত্নতাত্ত্বিকরা যখন এই গুহার ইতিহাসের ব্যাপারে জানতে পারেন, তখন সেই পুরনো দুর্গা মূর্তির জন্য খননকার্য চালানো হয়। শোনা যায়, তখন এক বিষধর সাপ তাদের সামনে রুখে দাঁড়ায়।
ওই ঘটনার পর আর কেউ এই গুহায় খনন করার সাহস দেখাননি। স্থানীয়রা বলেন, সেই সাধুই প্রথম এখানে দুর্গা পুজোর প্রচলন করেন। পরবর্তীতে তিনি যখন চলে যান, তখন গ্রামবাসীদের বলে যান যেন কোন অবস্থাতেই পুজো বন্ধ না হয় এই গুহায়। গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, একবার পুজো বন্ধ হয়েছিল এই গুহায়। আর সেবারেই গ্রামের উপরে মাওবাদী আক্রমণ হয়। এমনকি, জঙ্গলমহলে প্রথম পুলিশ খুন হয়েছিল সেই বছরেই। সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয়দের মনে পড়ে সেই সাধুর সতর্কবাণী। এরপর থেকে আর কোনদিন লালজল গুহায় পুজো বন্ধ করেননি গ্রামবাসীরা।
কোথায় আছে সেই দুর্গা মূর্তি? লালজল গুহার ঠিক একধাপ নিচে রয়েছে সেই দুর্গা মন্দির। পাহাড়ের কোলে ওই সাধু বাবার জন্য একটি আশ্রমও গড়ে তোলা হয়েছিল। সেখানেই এখনো নিত্য পুজো হয়ে আসছে মা দূর্গার। এই আশ্রমেই পুজোর চারদিন বিশেষ ধুমধাম করে দেবী বন্দনা করেন গ্রামের সকলে। বিশেষত, নবমীর দিন আয়োজন হয় বাসন্তী পুজোর। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত, ভক্তদের আনাগোনা চলে সেদিন। এমনকি, ঝাড়খন্ড থেকেও কিছু মানুষজন আসেন সেই পুজো দেখতে। পুজোকে কেন্দ্র করে একটা মেলাও বসে ওই এলাকায়। গ্রামের সকল পুরুষরা মাথায় ঘট নিয়ে ঢাক-ঢোল এবং বাদ্য সহযোগে গ্রাম প্রদক্ষিণ করেন।
Discussion about this post