চন্দননগর- নামটা শুনলেই আগে মনে আসে বিশালাকৃতির জগদ্ধাত্রী প্রতিমার কথা। চন্দননগরের অধিকাংশ বারোয়ারিগুলিতে জগদ্ধাত্রী প্রতিমাগুলি স্থানীয় পুজো প্রাঙ্গণে তৈরি হলেও এখনও অনেক বারোয়ারি চন্দননগরের কুমোরপাড়া থেকে প্রতিমা এনে পুজো করে। এছাড়া বিভিন্ন বনেদি বাড়ির জগদ্ধাত্রী প্রতিমাগুলিও এই কুমোরপাড়ার বিভিন্ন স্টুডিও গুলিতে নির্মিত হয়। এরকমই একটি উদাহরণ হল মৃৎশিল্পী কিরণচন্দ্র পালের স্টুডিও। এই ষ্টুডিওতে গিয়ে দেখা গেল স্বামী কিরণচন্দ্র ও অন্যান্য মৃৎশিল্পীদের সাথে প্রতিমা নির্মাণে হাত লাগিয়েছেন শ্রীমতী আরতি রাণী পালও।
বিয়ের আগে প্রতিমা নির্মাণ সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকলেও বিয়ের পর প্রতিমা গড়ায় মুন্সিয়ানা দেখিয়ে চলেছেন আরতি রাণী দেবী। প্রতিমায় মাটি লেপা, আকার দেওয়া, রং করা, প্রতিমার মাটির গহনা ও সাজসজ্জা বানানো, শাড়িতে হাতে আঁকা নকশা ফুটিয়ে তোলা- সবেতেই তিনি সিদ্ধহস্ত। তুমুল কর্মব্যস্ততার মধ্যেও আরতি দেবী জানালেন, কেবল জগদ্ধাত্রী প্রতিমাই নয়। সারাবছর তিনি স্বামীর সাথে হাত লাগান দূর্গা, কালী, লক্ষ্মী, সরস্বতীসহ অন্যান্য প্রতিমা নির্মাণেও। এ বছর তাঁর হাতের তৈরী জগদ্ধাত্রী প্রতিমা পাড়ি দেবে চন্দননগরের বাইরে নৈহাটী, হাওড়া ও অন্যান্য দূরদূরান্তের পুজোতেও।
তবে কো-১৯ পরবর্তী কালে প্রতিমা নির্মাণ শিল্প ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তুমুল দ্রুততায় প্রতিমায় রং করতে করতে আরতী দেবী জানালেন, মহামারীর সময় লকডাউনের জন্য প্রতিমা নির্মাণের বরাত একেবারেই তলানিতে এসে ঠেকে। তার সাথে পাল্লা দিয়ে মূল্যবৃদ্ধি ঘটে প্রতিমা নির্মাণ শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় মাটি, খড়, পাট ও অন্যান্য কাঁচামাল সামগ্রীর । কিন্তু প্রতি পূজাতেই ক্রেতারা প্রতিমার মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে যান। সেই পুরনো দামেই প্রতিমা কেনার জন্য তারা জোরাজুরি করেন। ব্যবসা ধরে রাখার জন্য মৃৎশিল্পীদের নামমাত্র লাভ রেখে প্রতিমা বিক্রি করতে হচ্ছে। এর ফলে তাদের সংসার চালানো দুঃসহ হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতে বাধ্য হয়েই আরতি রাণী পাল ও তাঁর স্বামী কিরণচন্দ্র খুলেছেন মাটির তৈরী টব, বাসন ও গৃহসজ্জার সামগ্রীর দোকান।
স্বামী, শাশুড়ি, কন্যা ছাড়াও আরতি দেবীর সংসারের অন্যতম সদস্য হলো আটটি বিড়াল ও একটি কুকুর। লকডাউনে নিজেরা কষ্ট করে থাকলেও পোষ্যদের কোনো যত্নের ত্রুটি রাখেননি তিনি। আসলে দেবী দশভুজারা তো কেবলমাত্র পুজো মণ্ডপেই আবদ্ধ থাকেন না, তাঁরা ছড়িয়ে আছেন এই সমাজের প্রতিটি স্তরেই। কখনও গৃহবধূ, কখনও বা মা, কখনও শিল্পীর ভূমিকায়। তারা পর্দার সামনে বা আড়াল থেকে প্রতিনিয়তই সেবা করে চলেছেন এই সমাজের।
Discussion about this post