‘চুম্বন’! ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশে ওষ্ঠ-অধরের খেলা। কখনো কপোলে কখনো কপালে। সবই ‘লাভ হরমোন’ এর ভেলকি। প্রেমের উপাখ্যানের বাইরেও ঘুরতে বের হয় চুমু। এমন কি জীবন-মৃত্যুর কাঁটাতারেও কি অবলীলায় যাতায়াত! তখন সে হয়ে ওঠে মারাত্মক জীবনদায়ী! এখন মাথায় আসতেই পারে জার্মানির রূপকথা, স্নো হোয়াইটের গল্প। সেই যে স্নো হোয়াইট প্রাণ ফিরে পেয়েছিল রাজকুমার ফ্লোরিয়ানের চুম্বনে। ভালোবাসায় উষ্ণ চুম্বনই তখন তার একমাত্র পরিত্রাতা! রূপকথায় নয় বরং ইতিহাসের থলিতেও এমন বাস্তব উদাহরণ রয়েছে।
সময়টা ১৯৬৭ এর জুলাই মাস, স্থান ফ্লোরিডার জ্যাকসন ভিল। নিজের কাজ সেরে ফিরছিলেন আমেরিকান ফটোগ্রাফার রোকো মোরাবিতো। ফটোগ্রাফার চোখ থেকে বাদ পড়েনি ফিরতি পথে বৈদ্যুতিক খুঁটির কাজ। লম্বা লম্বা খুঁটির চূড়োয় বসে কাজ করছেন এক একজন ইলেকট্রিক মিস্ত্রি। ক্যামেরা হাতে তিনিও নেমে পড়লেন গাড়ি থেকে। ভাবলেন এই ফাঁকে কয়েকটা ভালো ছবি সংগ্রহ করবেন। ক্যামেরা লেন্সে চোখ বোলাতে বোলাতে হঠাৎই কানে এল আর্তনাদ! একটি খুঁটিতে কোনোরকমে ঝুলে আছেন একজন মিস্ত্রি। নাম রান্ড্যল চ্যাম্পিয়ন। খুঁটির একেবারে শীর্ষে তিনিই ছিলেন। কাজ করতে করতে কোনোভাবে হঠাৎই বৈদ্যুতিক তারে হাত পড়ে যায় তাঁর। ব্যস, সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে সংজ্ঞাহীন! তবে রক্ষে ওই একটিই। কোমরে বাঁধা ছিল হার্নেস। যেন জীবনরক্ষা কবচ!
ওদিকে প্রায় ৪০০ ফিট দূরের একটি খুঁটিতে কাজ করছিলেন রান্ড্যলের সহকর্মী জে ডি থম্পসন। দূর থেকে সহকর্মীকে এভাবে ঝুলে থাকতে দেখেই ছুটে আসেন তিনি। কোনোরকমে পাশের খুঁটিতে উঠে রান্ড্যলকে শক্ত করে তুলে ধরেন। এদিকে ঠিকঠাক ভাবে নামাতেই পারছেন না সহকর্মীকে, আর অন্যদিকে মৃত্যু ভয়! সহকর্মীর বুকে ক্রমাগত চাপ দিতে থাকেন থম্পসন। ফুসফুসকে থামতে দিলেই যে মুশকিল! উপায় না পেয়ে সহকর্মীর ঠোঁটেই চেপে ধরেন নিজের ঠোঁট। সহকর্মীর শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক করার চেষ্টায় তখন তিনি মগ্ন। পাঁজাকোলা করে চেপে ধরে আছেন ওই লম্বা খুঁটির চূড়োয়! আর এদিকে নীচে, থেমে নেই মোরাবিতোর ক্যামেরাও। তাঁর ক্যামেরা মুহূর্তেই বন্দি করল জীবন-মৃত্যুর দড়ি টানাটানি খেলা। থম্পসনও সফল হলেন সহকর্মীর প্রাণ বাঁচাতে। কোনোরকমে তাঁকে নীচে নামিয়ে ডেকে আনা হল ডাক্তারকে। মোরাবিতোর গাড়ির রেডিও থেকেই যোগাযোগ করা হয়েছিল ডাক্তারের সঙ্গে।
এই ছবিটির জন্য রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে উঠলেন মোরাবিতো, রান্ড্যল আর থম্পসন। মোরাবিতো ছবিটির নাম দিলেন, “কিস অফ লাইফ”! যদিও তা ছিল আপৎকালীন শ্বাস চলাচল রাখার চেষ্টা। তবে সে তো জীবনদায়ীও ছিল! এই ছবিটির জন্য ১৯৬৮ সালে পুলিৎজার পুরস্কারও পেলেন মোরাবিতো। মানবিকতা-ভালোবাসা-চুম্বন সব কেমন হাত ধরাধরি করে এগিয়ে চলেছে জীবন-মৃত্যুর ধাঁধায়। তাই ভালোবাসলে চুম্বন তেমন আবশ্যিক, তেমনি জীবন বাঁচাতেও কখনো কখনো চুম্বন ভীষণই গুরুত্বপূর্ণ।
Discussion about this post