হুগলি জেলার মধ্য দিয়ে বয়ে চলা কয়েক শতাব্দী প্রাচীন দামোদর নদের একটি প্রবাহ ‘কানা দামোদর’। কানা দামোদরের পশ্চিম পাড়ে রয়েছে প্রাচীন গোলামী পীর সাহেবের মাজার। হুগলীর ধনিয়াখালির অন্তর্গত ঐতিহাসিক স্থান দশঘড়া। দশঘড়া থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে শাহবাজার অঞ্চলে অবস্থিত এই প্রাচীন মাজার। বহু বছরের প্রাচীন এই মাজার দেখতে বছরের বিভিন্ন সময়ে ভিড় জমান জেলা ও পাশ্ববর্তী অঞ্চলের বহু দর্শনার্থী। কেরমানী সাহেবের এই মাজারকে কেন্দ্র করে মাঘ মাসের প্রথম সপ্তাহে এক বিশাল মেলার আয়োজন করা হয়। সাত দিন এই মেলা চললেও উৎসবের আমেজ থেকে যায় প্রায় ১০ দিন। বিগত প্রতি বছর মাঘ মাসের ১ তারিখ থেকে এই মেলা শুরু হলেও করোনার কারনে এই বছর মাঘ মাসের ৯ তারিখ থেকে শুরু হয় এই মেলা।
প্রতিদিন প্রায় দশ হাজারের বেশী মানুষ আসেন এই ঐতিহ্যবাহী মেলাতে। গোলামী সাহেবের মাজারে সিন্নি আর ঘোড়া দিয়ে শ্রদ্ধা জানান হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে সবাই। মেলাতে পীর সাহেবের গানের পাশাপাশি মেলার শেষ ৫ দিন দর্শনার্থীদের জন্য যাত্রাপালার আয়োজন করা হয়। সিঙ্গুর, গুপ্তিপাড়া সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঝুড়ি, বেতের আসবাবপত্র ও সামগ্রী নিয়ে হস্ত শিল্পীরা আসেন এই মেলাতে। এছাড়াও বহু মানুষ রকমারি খাবারের স্টল নিয়ে বসেন এখানে।
জন তথ্য অনুযায়ী, “পীর আব্দুল্লাহ কেরমানীর পঞ্চম পুরুষ হলেন পীর সৈয়দ গোলাম আলি কেরমানী। ১৬৭০ সালে তিনি এই দামোদর তীরবর্তী এই শাহবাজার বা সাহাবাজার অঞ্চলে এসেছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর এখানেই গড়ে ওঠে পীর গোলাম আলির মাজার। তার পূর্বপুরুষেরা ইরানের কেরমান শহর থেকে এসেছিলেন, সেই কারনেই। তাদের নামের সাথে রয়েছে কেরমানী উপাধি। অনুমান করা যায় তখন থেকেই এই মেলা শুরু হয়।”
মাজারের পূর্বদিকে আছে শাহবাজার পীরের পুকুর। এই পুকুরকে ঘিরে রয়েছে এক প্রাচীন আস্থা। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, ভক্তরা প্রথমে মাজারে মানত করে পুকুরের দক্ষিণ-পশ্চিম তীরে একবুক জলে দাঁড়িয়ে সিন্নি পুকুরে ভাসিয়ে দেয়। তারপর অপেক্ষা করেন বেশ কয়েক ঘণ্টা। বিশ্বাস করা হয় যদি সেই সিন্নি পুকুরের উত্তর-পশ্চিম যেখানে মাজার আছে সেখান থেকে আবার দক্ষিণ-পশ্চিম তীরে ফিরে আসে। তবে সেই ভক্তের মনোবাসনা পূর্ন হবে। হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে এই এই প্রথায় অংশগ্রহণ করে থাকেন।
মেলার এক দর্শনার্থী, ইতিহাস প্রেমী তরুন কোলে জানান- “একটি মাজারকে কেন্দ্র করে এত সুন্দর বড়ো গ্রামীণ মেলা সত্যিই দেখা যায় না। প্রতিবার না হলেও মাঝে মধ্যেই আসি এই মেলাতে। বেশ ভালো লাগে এই মিলন মেলায় আসতে। তবে এইবার অনেক খুঁজেও টেমটেমি খেলনা পেলাম না। অথচ আগে প্রায় ২০, ৩০ টা দোকান বসত মেলায়। এই খেলনার সাথে জড়িয়ে আছে আমাদের শৈশবের স্মৃতি।”
Discussion about this post