কাশ্মীরের জঙ্গি হামলা। তারপর থেকেই আমাদের দেশ উত্তেজিত। শুধু ভারত কেন, সারা বিশ্ব প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে এই ঘটনা সম্পর্কে। সোশ্যাল নেটওয়ার্ক এবং সংবাদমাধ্যম খুললেই দেখা যাচ্ছে শুধুমাত্র এই সংক্রান্ত খবর। ছড়ানো (Circulate) হচ্ছে হামলার সময়ের ছবি, ভিডিও। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতামত এবং অভিজ্ঞতা শেয়ার হচ্ছে, কেউ কেউ ঠিক এক মাস আগে ঠিক ওইখানে বেড়াতে গিয়ে কী দেখেছিলেন তার বর্ণনা দিচ্ছেন- এগুলো সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার হবার সঙ্গে সঙ্গে লুফে নিচ্ছে সংবাদ মাধ্যম, তৈরি হচ্ছে হেডলাইন। সত্যি-মিথ্যে সবধরণের খবরই নির্বিচারে গিলিয়ে দেওয়া হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। এর ফল কী হতে চলেছে?
২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে, মার্ক জাকারবার্গ ঘোষণা করেছিলেন যে, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এবং হোয়াটসঅ্যাপের জন্য ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রাম বন্ধ করা হতে চলেছে। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চালুও হয়ে গেছে। এই পরিবর্তনটি “কমিউনিটি নোটস” নামে একটি নতুন, ব্যবহারকারীদের দ্বারা পরিচালিত সিস্টেমের দিকে অগ্রসর হওয়ার অংশ হিসেবে আনা হয়েছে, যা এক্স (X) প্ল্যাটফর্মের মতো। আমাদের দেশে এখনও এই ব্যবস্থা চালু না হলেও, সোশ্যাল মিডিয়াতে পাবলিশ হওয়া লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি তথ্য, ছবি, ভিডিওগুলি সত্যি কি মিথ্যে তা জানার উপায়, সুযোগ বা সময় অধিকাংশ সাধারণ মানুষের নেই। ফলে, সাম্প্রতিককালের মত এই ধরনের রাজনৈতিক, সামাজিক বিশৃঙ্খলার সময়গুলিতে ভুল তথ্য পরিবেশিত হয়ে চলেছে নির্দ্বিধায়, এগুলোর প্রভাব বৃহৎ আকারে পড়ছে সমাজে।
পহেলগামের ঘটনার পরে পরেই সোশ্যাল মিডিয়া এবং সংবাদ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছিল মৃত এক নাগরিকের মৃত্যুর ঠিক আগের মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও। অন্তত সংবাদ মাধ্যমে তেমনটাই দাবি করা হচ্ছিল। ওই ভিডিওতে পুরুষটির সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রীও। কিন্তু, পরবর্তীকালে ওই ভিডিওর দম্পতি নিজেদের ইনস্টাগ্রাম একাউন্টে (Instagram account) এসে দাবি করেছেন সোশ্যাল মিডিয়াতে এবং সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত ওই ছবিটি ওনাদের, তাঁরা মারা যাননি, গুলিও খাননি। তাঁদের এই ভিডিওকেও অনেকে ফেক বলে দাবি করছেন। ফলে ব্যাপারটি এখনই ধোঁয়াশায়। তবে, সংবাদমাধ্যমে তাঁদের ওই ছবি দেখানো বন্ধ হয়েছে।
এই ঘটনা নতুন নয়। পুলওয়ামা হামলার (২০১৯) পর অনেক ভুয়ো ছবি ভাইরাল হয়েছিল। যুদ্ধের পুরনো ভিডিওকে নতুন বলে ছড়ানো হয়ে থাকে বিশ্বজুড়ে। করোনার (২০২০-২১) সময় ছড়ানো হয়েছিল যে গোমূত্র পান করলেই সেরে যাবে করোনা। কৃষক আন্দোলনের(২০২০-২১) অনেক ভুয়ো ভিডিও ছড়িয়ে দাবি করা হচ্ছিল কৃষকরা পুলিশের ওপর আক্রমণ করছে। এছাড়া আরো হাজার হাজার উদাহরণ মিলে যাবে। এই ভুল খবরগুলি জনমানসের ভাবনাচিন্তার উপর প্রভাব ফেলে নিঃসন্দেহে, পরিষ্কার এবং নিরপেক্ষভাবে চিন্তা করার পথ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়। এই অবস্থায় মানুষের সচেতন হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। অর্ধেক মানুষ Fact Check সম্পর্কে অবগত নন, তাঁদের জানানো প্রয়োজন।
Discussion about this post